আমার মা এবং গিরিশ কর্ম
আজকে হচ্ছে পহেলা মার্চ। ২০১৬ সালের এই দিনে আমাদের মা ইহলোক ত্যাগ করেন। আমার মাকে নিয়ে আজকে দুটো/তিনটে বিষয় একটু স্মৃতিচারণ করব।
ডিম ভাজিঃ
আমি ছোট বেলায় ডিম সেদ্ধ খাওয়ার থেকে ভাজি (ডিম ভাজি বলতে সহজ ভাষায় যা বুঝি মানে পেঁয়াজ মরিচ দিয়ে ডিম ভাজি) খেতে পছন্দ করতাম। আমি মাকে বলতাম মা আমাকে বড় করে ডিম ভাজি করে দাও। মানে একটা ডিম তো একটা ডিমই, সেইটার পরিমানতো আর বাড়ানো যায় না কিন্তু যদি কড়াইতে অনেক বেশি জায়গা নিয়ে ডিমটা ছড়িয়ে ভাজা হয় তাহলে অনেক বড়ই মনে হয়। অন্তত সেই শৈশবে এই বড় ডিম ভাজি আমার জন্য ছিল একটা আনন্দের উৎস। একদিন সবার জন্য ডিম ভাজি হল। আমার মনে হল আমাকে যে ডিম ভাজি দেওয়া হয়েছে সেটা ছোট। আমি বায়না ধরলাম যে আমি এই ছোট ডিম খাব না। পরে মা উপরন্তু না পেয়ে সেই বড় আকারে ডিম ভেজে দিলেন। এমনিতে আমার মায়ের রান্নার হাত ছিল মারাত্মক, তিনি অসাধারণ রাধুনি ছিলেন। তার রান্না স্কিল নিয়ে ২৩ পাতা লিখে ফেলা যাবে। আজকে ওদিকে যাব না।
গিরিশ কর্মঃ
সম্ভবত একটা রংয়ের কৌটার ভেতর কিছু ব্যবহৃত বা পুরাতন কিছু লোহালক্কর এর জিনিস থাকত আমাদের বাড়িতে। ধরেন পেরেক, জিনেরি , স্ক্রু এই ধরনের কিছু। বাবা মাঝে মাঝে বাড়ির কিছু সারানোর জন্য এগুলো ব্যবহার করতেন। আমার এই পুরাতন জিনিসের কৌটার প্রতি প্রচন্ড আকর্ষণ কাজ করত। মাঝে মাঝে এই কৌটার জিনিস পত্র কোন ছালার উপর ঢেলে নাড়াচাড়া করতাম বা কিছু করার চেস্টা করতাম। এই ধরনের কোন কাজ করতে দেখতে আমার মা বলত, কি গিরিশ কর্ম কত্তিছিস ? গিরিশ কর্ম বলতে মা সম্ভবত স্বাভাবিক কাজ কর্মের বাইরে ব্যতিক্রম কিছু করাকে বুঝাতো কিনা জানি না। মাঝে মাঝে মতমত কাজ না এমন কিছু আবার অন্য দিকে মনে হত বিশেষ কিছু করাকে মা গিরিশ কর্ম বলতেন। এই ‘গিরিশ কর্ম’ শব্দটা মা কোথা থেকে পেয়েছিলেন আমি জানি না। তবে গিরিশ চন্দ্র সেন এবং গিরিশ চন্দ্র ঘোষ নামে দুজন বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন। আমার মা কি উদ্দেশ্যে এই ধরনের কাজ কর্মকে গিরিশ কর্ম বলতেন আমার জানা নাই।
খাওয়ার পর থাল না ভিজিয়ে রাখলে মায়ের বুক শুকিয়ে যাওয়াঃ
মা বলতেন, মনি খাওয়ার পর থাল জল দিয়ে ভিজায়ে না রাখলি মায়ের বুক শুকায়ে যায়। তো আমি ছোট বেলা থেকে কম বেশি চেস্টা করি খাওয়ার পর থালে একটু জল ঢেলে রাখতে, এখন অবশ্য জল দিয়ে এবং সময় পেলে জল দিয়ে + ভিম দিয়ে ধুয়েই রাখি। মা কেন জল ঢেলে রাখতে বলত এবং এর সাথে মায়ের বুক শুকিয়ে যাওয়া মানে খাওয়ার পর থাল শুকিয়ে যাওয়ার সাথে মায়ের বুক শুকিয়ে যাওয়ার মিল কোথায় সেইটার একটা অর্থ আমার নিজের মত আমি দাড় করেছি। এটা হচ্ছে, থাল শুকিয়ে যাওয়া মানে অনেক সময় ধরে খাওয়া যা ঠিক না। হয়তো সন্তানের খাওয়া শেষ হবার জন্য মায়েদের অনেক সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয় তারপর তারা খান। এর ২য় কারণ হচ্ছে, খাওয়ার পর যদি থালের ময়লা শুকয়ে যায় এবং সেই ভাবে রাখা হয় তাহলে থাল যখন পরিবারের মহিলা সদস্য বা মায়েরা পরিস্কার করেন তখন তাদের অনেক কষ্ট হয়। আগেকার দিনে এক পরিবারে ২০-৩০ জন সদস্য কোন বিষয়ই ছিল না। একবার ভাবুন ২০টা ময়লা শুকিয়ে যাওয়া থাল + রান্নার অনান্য হাড়ি বাসন একজন মানুষের ধুতে কত সময় লাগার কথা এবং সেটা করতে গেলে পরিশ্রমে বুক শুকিয়ে যাবার কথা।
সবাই ভালো থাকবেন। আমার মায়ের জন্য দোয়া/আশীর্বাদ/শুভকামনা জানাবেন।
এক্সপেক্টেশন ভার্সেস রিয়েলিটি
১. সকালে নড়াইল থেকে ঢাকায় আসার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হলাম। ২ মিনিট এর জন্য একটা বাস মিস করলাম। পরের টা ৩০ মিনিট পরে ছাড়ল। ভোরে ঘুম থেকে উঠে অলসতা করে খাটের উপর বেশ কিছুক্ষন ঘাপটি মেরে ছিলাম।
২। ঢাকা আসলাম ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ নামের একটা পরিবহনে যাদের নড়াইল থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০-৪৫টা গাড়ি ছাড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে এবং ফিরত যায়। কথিত আছে নড়াইলের সবচেয়ে বাজে পরিবহন কিন্তু এদের এভেইলাবিলিটি সেই রকমের। মানে আপনি নড়াইল থেকে ঢাকা কিংবা ঢাকা থেকে নড়াইল যাইতে পারবেন প্রতি ৩০ মিনিট পরপর। সম্ভবত এদের কারণে যশোর থেকে ছেড়ে আসার ঢাকা গামী কোন পরিবহন নড়াইল থেকে যাত্রি তুলতে পারে না যদি তাদের নড়াইলে কোন অফিসিয়াল কাউন্টার না থাকে। আছেই হাতে গোনা দুই/তিনটার। এদিকের এদের গাড়ির মান এক একটা এক রকম। মানে ৩০টা বাস ৩০ রকম এর কারণ মালিক ৩০ জন হয়তো।
৩। ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ এর গাড়ি একটা যশোর থেকে ছাড়ে এবং পরেরটা নড়াইল থেকে ছাড়ে এবং এভাবেই রোটেট করে। যশোর থেকে ছেড়ে আসা গাড়িতে সিট অর্ধেকের বেশি বুক থাকে বা যাত্রী নিয়ে আসে, মানে আপনি সামনের দিকে সীটে বসতে পারবেন না। নড়াইল থেকে যেটা ছাড়ে সেইটার সব সীট ফাঁকা থাকে মানে আপনি যেইটা চাইবেন বসবেন।
৪। গাড়িতে যত যাত্রী বেশি গাড়ি তত জোরে চলবে। মানে যাত্রী কম তাহলে ঘাটে ঘাটে দাঁড়াবে আর যাত্রি তুলবে, যাত্রী ফুল মানে কোথাও দাড়াদাড়ি নাই।
৫। নরমালি ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট থেকে ৩ ঘন্টা ৩০ মিনিট লাগে নড়াইল থেকে ঢাকা বা ঢাকা থেকে নড়াইল। আজকে যাত্রি ফুল ছিল এবং ২ ঘন্টা ১৫ মিনিটে নড়াইল থেকে যাত্রাবাড়ি আসছি। এটা এখন পর্যন্ত আমার ঢাকা টু নড়াইল কিংবা নড়াইল টু ঢাকা যাতায়াতের সর্বনিম্ন। আমার ধারণা ১ ঘন্টা ৪৫ মিনিটে নড়াইল থেকে ঢাকা আসা যাওয়া সম্ভব।
Find the post as status in facebook here
হাহুতাশ এবং ‘হাহা’
একদিন দলে দলে সোনার ডিম পারা হাঁসের লোভে
ঘর ছাড়া সাথীরা পরবর্তিত পরিস্থিতিতে বিষ্মিত হতে হতে থিতু হবে।
একদিন মটিভেশন এর চোটে ছটফটানিতে ভুগা হার্ট
ছুটে বেড়াবে দিগ্বিদিক, ডিমটিভেশন এর গুরুর খোঁজে।
সেদিন পেছন ফিরে আর নিজের পেছন দেখতে পাবে না,
সেদিন হাহুতাশ করতে কতে হা হয়ে থাকা হা পরিনত হবে ‘হাহা’ তে।
২৬ অক্টোবর, ২০২২
হাতিরপুর, ঢাকা
এ হাওয়া
এ হাওয়া, আমায় কোথাও নিয়ে যেও না।
আমি এখানে অনেক বছর থাকব।
আমার বীজ ঝুনো হলে এখানেই আমি বাচ্চা ফোটাবো।
এ হাওয়া, আমি গাছ কিংবা গাছের মত,
আমাকে নাড়া দাও কিন্তু ফেলে রেখে যাও।
আমি এখানেই আমার শিশুদের আমার শৈশব এর গল্প শোনাবো।
এ হাওয়া, এ হাওয়া …
আমাকে এখানেই রেখে যাও।
আমাকে ছুঁয়ে যাও কিন্তু কেড়ে নিয়ে যেও না।
দিনকাল
বাইরে অন্ধকার হয়ে আসছে,
মনে হচ্ছে প্রচন্ড বৃষ্টি হবে।
আপনাদের যাদের ঘরে পয়সা নাই,
ঘরে খাবার নাই,
পেটে খিদে আপনারা রাস্তায় বের হয়ে আসেন।
রাস্তায় এসে আকাশের দিকে মাথা তুলে ধরুন,
যতটুকু পারা যায় জিহবা বের করে রাখুন।
প্রতিটি বৃষ্টিকনাকে জিহবা দিয়ে আকড়ে ধরার চেস্টা করুন,
পেট ভরে বৃষ্টি খান।
আপনাদের যাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে তারা দাঁড়িয়ে তামাশা দেখবেন না।
দেওয়ালে পিঠ চুলকে নেন,
সমস্যাকে আপন করে কিছুটা হলেও সুবিধা নিয়ে ঘরে ফিরে তৃপ্তির ঢেকুর তুলুন।
আত্মচিৎকার
আদরের ঝরাপাতা মাটিতে পতিত হবার আগে এসো
আর একটি বার করি আত্মচিৎকার।
শব্দজট গল্পজট এর ফাঁদ পেরিয়ে অশান্ত কবিতার মত
এসো উড়ে বেড়াই সচিত্র কিংবা নির্বিকার ।
জুলাই ১৬, ২০১৩
Manage WordPress Cron using Crontab or Cpanel Cron Jobs
নিষেধাজ্ঞা না
প্রিয়তমা ন্যাটো জোট রাশিয়ার উপর অনেক রকম নিষেধাজ্ঞা দিলেও
আমি তোমার উপর কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করব না।
তুমি চাইলে আমাকে আরো বেশি বেশি ভালোবাসতে পার।
আমি তোমার দুয়ারে সাউন্ড গ্রেনেড, ভ্যাকুয়াম বোমা কিছুই ফাটাবো না।
এমনকি গোলাপের সুবাশও ছড়িয়েও তোমাকে পাগল করব না।
আমি তোমার বাড়ির আঙ্গিনায় গাছের পাতার ফাঁকে লুকিয়ে
টুকি টুকি দেব।
তুমি সুযোগ পেলে উকি উকি দিও।
আপনার থাপ্পড় এর রেশিও ঠিক আছে কী?
এক ব্যক্তি ২য় অন্য ব্যক্তিকে উত্তপ্ত আলোচনার এক পর্যায়ে দিল গালে কষে থাপ্পড় কসিয়ে। ২য় ব্যক্তি ১ম ব্যক্তির হাতের দিকে উদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে থাকিয়ে থাকল। ১ম ব্যক্তি ব্যক্তি আরো রাগত স্বরে চিৎকার করে জিজ্ঞাসা করল হাতে কি দেখেন?
২য় ব্যক্তি উত্তর দিল, “মনে হচ্ছে আপনার হাতের রেশিও ঠিক নাই !”
…
২য় ব্যক্তি থাপ্পড় এর ব্যাথা ভুলে গেল দিন শেষে, মনের কষ্টও দিন শেষ হতে হতে হালকা হয়ে গেল।
১ম ব্যক্তি সারা দিন তার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে পার করল যে তার হাতের রেশিও কি আসলেই সমস্যা, দিন শেষে রাতেও তার ঘুম আসল না হাতের চিন্তা নিয়ে … এভাবে হাত নিয়ে ১ম ব্যক্তি দিনের পর দিন পর করে ফেলল, তার হাতে সমস্যা, তার হাতের রেশিও ঠিক নাই।
নোটঃ ২য় ব্যক্তি হিমু হতে পারে, ১ম ব্যক্তি কে আমি জানি না।
পরামর্শঃ কাউকে থাপ্পড় দেওয়ার আগে হাতের রেশিও ঠিক আছে কিনা দেখে নিবেন।