প্রতীক্ষা কিংবা চাঁদের জন্য অপেক্ষা

ঘোর অমাবস্যার কাল পেরিয়ে পূর্ণিমার জন্য মানুষের অনন্ত প্রতীক্ষা,
মানুষ অপেক্ষা করতে ভালোবাসে।(?)
ছোটবেলায় স্থির আমি প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।
অনেকবার মাকে জিজ্ঞাসা করেছি, আচ্ছা মা চাঁদ মামা কেন আমার পিছে পিছে ঘুরে ?

আমার পিছে পিছে ঘুরা চাঁদ মামা আজ স্থির, আমিই অস্থির ভাবে চাঁদের জন্য অপেক্ষা করি সারাটা অমাবস্যা।
অপেক্ষা করতে আমার বিরক্তি লাগে না, নিয়মটাই যেন এমন যে শুধু আমিই অপেক্ষা করব, আর কেউ নয় !

এই এত্তবড় চাঁদের জন্য অপেক্ষা না করে পারা যায়।

পৃথিবীতে যুগে যুগে অনেক চন্দ্রগ্রস্থ মানুষের হাহাকার করেছে…
আমি চন্দ্রগ্রস্থ নই, চাঁদের প্রতি আমার কোন আসক্তি নেই।
আমি সম্ভবত চাঁদের থেকে চাঁদের আলো ভালোবাসি।

আচ্ছা পৃথিবীর কি দুইটা চাঁদ হলে খুব ক্ষতি হত ?
যদি আমার উপর দুই চাঁদের নামকরণের দায়িত্ব দেওয়া হত আমি কি নাম দিতাম ?
কি নাম দিতাম জানি না, তবে আমি ঘোষনা দিয়ে দিতাম আজকে থেকে অমাবস্যা বন্ধ !

…………………………………………………………।।
মানচুমাহারা, ২৮।০৪।২০১৩

মেঘানুভূতি

ঘনকালো মেঘের ছড়াছড়ি আকাশ জুড়ে,
অতল-গভীর-জমাট-উত্কন্ঠা নিয়ে-
প্রচন্ড বেগে ছুটে আসতে চায় মাটিতে।।
ভিজিয়ে দিতে পথ-ঘাট, কষ্টের ঝর্ণা ধারায়……

বোকা আকাশের মন খারাপে মেঘের মাতামাতি
ভারী কষ্টগুলো ঝরে পরে বর্ষা হয়ে,
ভিজে যাই আমি-তুই-আমরা।।

আমার মনেও মেঘ জমে, জমে জমে মেঘগুলো ভারী হয়।।
আমি তো বর্ষা আনি না,
আমি তো তোকে ভেজাতে পারি না।।

আমি নিঃশ্বাস বন্ধ করে মেঘগুলো খেয়ে ফেলি।।
দুঃখগুলো প্রচন্ড উষ্ণতায় উদ্বায়ী হয়ে উড়ে যায়।।

বন্ধু তোর মেঘগুলো জমে ভারী হলে আমাকে দিস।।

হয়তো একদিন নিজেই মেঘ হয়ে যাব,
তোমাদের সব মেঘ চুরি করে আমি হব মেঘরাজ।।

হয়তো প্রচন্ড মেঘলা এক দিনে হয়ে যাব মেঘানুভূতি শূণ্য,
মেঘ প্রতিবন্ধী।।
………………………………………………
মানচুমাহারা

//২০১০ এর দিকে লেখা মনে হয়

অংক

একদিন চুপচাপ বসেছিলাম,
একটা অংক কষেছিলাম,
যোগ ভাগ বিয়োগ …
ভগ্নাংশ, অনুপাত-সমানুপাত
তারপর আমি কাত !

মায়া

কথা নয় মিছে ভালোবেসে পিছে খুন হয়ে যাবে লাশ
হিরকের ধারে খাঁজ কাটা হবে বলে কাঁচের উল্লাস।
বাতাসে গায়ে কথা ভেসে ভেসে উড়ে যাবে পাহাডের গায়
পাহাড় তুমি কি জানো ? মানো বা না মানো, ভুল তুমি দাঁড়িয়ে ঠায়।

রোদের আঁচে পুড়ে পুড়ে বাঁচে, পথিকের পথ কি ফুরায় ?
পথ তুমি কিযে ! আঁকো বাঁকো মিছে, অচেনা ইচ্ছে ভেলায়।
ছায়ার কি দোষ, মায়া পড়ে যায়, যদি দেখা হয়ে যায় পথে।
ইচ্ছেটা যদি পেরিয়ে যায় বাঁধা, খাঁচার সে পাখির হাসফাঁস কিযে !

(চলবে)

নোটঃ এই লেখাটার শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত উদ্দেশ্য এটাকে একটা গান হিসাবে রূপ দেওয়া। আমি ঠিক করেছি গান শিখব, তারপর নিজের লেখায় নিজে সুর করব। গান শেখা তবলা বাজানোর থেকে সহজ 😛

নিরাবতা

একদিন নিরবতা ভেঙে যে বীজের অংকুরোদগম হয়েছিল তার নিঃশব্দ চিৎকারে কি পৃথিবী প্রকম্পিত হয়নি ? হয়েছে, কেউ জেনেছে আর কেউ জানেনি। সবাই জানে না, সবাইকে জানার দরকার নাই।

তারপর সময়ের সাথে বীজ থেকে চারা, চারা থেকে গাছ … সে ইতিহাস হয়তো কেউ লিখে রাখিনি।
মাটি ফুঁড়ে গাছের শিকড় বয়ে গেছে আরো গভীরে পানি আর জীবনের সন্ধানে।
কিংবা ডালপালা গজিয়ে যে বটবৃক্ষের পাতা কি বাতাসে দোলা দেয় না, শনশন শব্দ কেউ শুনি কেউ শুনি না।

বিঃ দ্রঃ
আমরা যে নিরবতার পেছনে ছুটি তা কি আদৌ সম্ভব ? আমার মনে করি সম্ভব না। ব্যাপারটা বিন্দু আর বৃত্তের মত। নিরাবতা কিংবা চিন্তা বৃত্তের ঠিক শেষ যেখানে তারপরেই আবার কোলাহল শুরু হয়।

আপনি কোন থাকার কথা বলছেন ?

কেমন আছেন এই প্রশ্ন কাউকে করা কি উচিৎ ?
কেউ কেমন আছে তা জেনে আমার কি লাভ কিংবা সে কেন আমাকে জানাবে।
কেন সে মিথ্যা উত্তর দিবে, ভালো আছি।
আচ্ছা মানুষটা যদি উলটো জিজ্ঞাসা করে,
আপনি কোন ‘থাকার’ কথা বলছেন ? তাকে কি উত্তর দেব !

………………………
২৭।০৪।২০১৩, মানচুমাহারা

বিঃ দ্রঃ বন্ধু সুজিত এর সাথে একদিন কথা বলতে বলতে ফন্দি করে ফেললাম কেউ যখন জিজ্ঞাসা করবে কেমন আছি তখন তাকে এই প্রশ্নটা উলটা জিজ্ঞাসা করব, আপনি কোন ‘থাকার’ কথা কইছেন ? অবশ্য আপনজন ছাড়া উলটা প্রশ্ন করলে তাতে লোকসান বই লাভ কিছু হবে না।

মনের শরীর

আমি সব সময় ভেবেছি যদি শরীর থেকে মনটা আলাদা করে শিঁকোয় তুলে রাখা যেত।
কিংবা জামা কাপড়ের মত আড়ে ঝুলিয়ে রাখি, রোদে শুকোতে দেই,
ভিজিয়ে রাখি পানিতে কিংবা বাতাসে ছেড়ে দেই উঠে বেড়াক যেখানে খুশি।

বাতাসে ছেড়ে দিলে একটা সমস্যা আছে, ভুল ঠিকানায় উড়ে গিয়ে বাধাবে বিপদ !
পানিতে ভিজিয়ে রাখলে যদি নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, যদি মাছেরা খেয়ে ফেলে, মাছের মনতো !

আমি মনকে যদি একটা গুঁয়ে মাছির সাথে বেঁধে দেই ? উঠে বেড়াবে বাঁশি পচা নর্দমায় , মজা হত, ঘেন্না হত।

আচ্ছা মন শরীরকে নিয়ন্ত্রন করে নাকি শরীর মনকে, মন খারাপ হলে কি শরীর খারাপ হয়, শরীর খারাপ হলে কি মন খারাপ হয়,
মন কেন খারাপ হয় ? মন কেন ভালো হয় ? শরীর থেকে কি মন আলাদা করে ব্যাংকে জমা রাখা যায় না ?

আচ্ছা শরীরের যেমন মন থাকে, মনের শরীর থাকে না ? থাকা উচিৎ।

আমি অনেক বার ভেবেছি শরীর থেকে কিভাবে মনকে আলাদা করা যায়।
মনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে ঘুরে বেড়াবো। বকা দেব, ভালোবাসব।

………………………… মানচুমাহারা, ২৩।০৪।২০১৩

একটি হাস্যকর হাসি !

একজন প্রচন্ড হাসিখুসি মানুষ একদিন খেয়াল করলেন তিনি হাসতে পারছেন না।

তিনি আয়নার সামনে নিজেকে দেখলেন, হাসার চেস্টা করলেন কিন্তু কাজ হচ্ছে না।
তিনি হাসতে পারলেন না, হাসি কোথায় গেল ?

তিনি বাজার থেকে তুখোড় সব হাসির গল্পের বই কিনে আনলেন।
কিন্তু একি ! তিনি পড়ছেন আর আরো বেশি বেশি গম্ভীর হয়ে যাছেন, হাসিতো আসেনা,
ব্যাপারটা হাস্যকর পর্যায়ে যাবার পরও তিনি হাসতে পারছেন না।

…………………

হঠাৎ তার একটা পুরাতন কৌতুক মনে পড়ল, তিনি হো হো করে হেসে দিলেন।

…………… মানচুমাহারা, ১৯।০৪।২০১৩

বিঃ দ্রঃ কি কৌতুক মনে পড়ার পর তিনি হেসে দিলেন এটা আমিও জানি না।

চিৎকার

ঠিক যত জোড়ে চিৎকার করলে আমার গলার প্রকোষ্ঠ থেকে-
কন্ঠনালী ছিঁড়ে বেড়িয়ে আসবে তার থেকেও জোড়ে চিৎকার করতে ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে।
আমার চিৎকারে আমার কানের তালা লেগে যাবে,
বাঘে মহিষে এক ঘাটে পানি খাওয়ার সময় ঝগড়া বিবাদ ভুলে থর থর করে কাঁপবে।

আমার চিৎকারে মৃত্যু পথযাত্রী মৃত্যু যন্ত্রনা ভুলে ভীমড়ি খেয়ে চেয়ে থাকবে,
আমাজন জঙ্গলের আধা সভ্য মানুষগুলো কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে সভ্যতা থেকে পশ্চাৎপদ হবে।

আমি ঠিক তত জোড়ে চিৎকার করতে চাই যাতে আমি চিরদিনের জন্য আর চিৎকার করতে না পারি,
এই হবে আমার শেষ চিৎকার, আমি এরপর আর কোন শব্দ উচ্চারণ করতে পারবো না।

আমার প্রচন্ড চিৎকারে একজন বোমাবাজ বোমা ছুড়তে ভুলে যাবে, নিজের হাতেই বোমা ফুটিয়ে নিজেই ফুটে যাবে।
আমার প্রচন্ড চিৎকারে নতুন বিবাহিত দম্পতি সারা রাত কানে আঙুল দিয়ে কাটিয়ে দেবে।

আমি এতজোড়ে চিৎকার করব যে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের রাষ্ট্রপতি বিরক্ত হয়ে, ক্ষুব্ধ হয়ে বলবে, আহ ওকে থামা, ওর গলা চেপে ধর সাড়াশি দিয়ে।

আমার প্রচন্ড চিৎকারে মঙ্গল গ্রহের নতুন নাম হবে অমঙ্গল, পৃথিবীর সব জাত পাগল পাগলামী ভুলে করুনার দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে থাকবে নিষ্পলক। আমি হা হা হু হু শব্দে ভয়ংকর অসুরের মত দিক বিদিক প্রকম্পিত করে চিৎকার করে ডেকে আনবা মহাপ্রলয়।

আমি প্রচন্ড চিৎকারে এই মহাবিশ্বের ইকোসিস্টেমকে ধংস করে দিয়ে শান্তির ঘুম ঘুমাবো। আহ।

……………………………
মানচুমাহারা, ১৭.০৪.২০১৩ ১:১০ AM

রিট

কি হবে ছুটে মিছে অন্ধের পিছে,
কালের স্রোত বইছে পিঠে,
ভালোবাসা হয়না রে পাগল আদালতের রিটে !!

ref: My facebook status