আমরা কি আমাদের তারাদের ভালোবাসি না?

আমাদের ছোট ছোট তারারা জ্বলার আগেই নিভে যাচ্ছে,
তাদের নিভিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

ওদের গাড়ি চাপা দিয়ে মারা হচ্ছে,
কারো গায়ে গরম খুন্তির ছ্যাকা দেওয়া হচ্ছে।
রোজ সকালে ওদের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হয় শরীরের ওজনের সমান বইয়ের ভারি ব্যাগ।

আমাদের তারাদের মেরে ফেলা হচ্ছে।
বুঝতে শেখার আগেই কারো যৌনাঙ্গ হয়ে যাচ্ছে পাশবিক অত্যাচারে ছিন্নভিন্ন!
মিথ্যা চুরির অপরাধে পিটিয়ে মারা হচ্ছে ওদের।
ওরা জ্বলে উঠার আগেই দপ করে নিভে যাচ্ছে।

আমাদের তারাদের খেলার মাঠ ক্ষুধার্তরা খেয়ে ফেলছে।
ওদের শিক্ষা এবং পরীক্ষার পদ্ধতি চরম হাস্যকর।
আমাদের তারাদের জোর করে ইংলিশ খাওয়ানো হয়।
ওদের অনেকের স্কুলে মাঠ নাই, কারো মাঠ থাকলে সেই মাঠে কাঁদা জমে না, গরু চড়ে না। ওদের ঘাসের উপর হাটতে দেওয়া হয় না।

আমাদের তারাদের জন্য বিশুদ্ধ বায়ু নাই।
আমাদের তারাদের জন্য বিশুদ্ধ পানি নাই।
আমাদের তারাদের জন্য বিশুদ্ধ সবজি বাজারে বিক্রি হয় না।
আমাদের তারাদের খেতে দেওয়া মাছে ফরমালিন থাকে।
ওরা জ্বলে ওঠার আগেই নিভে যাচ্ছে। ওদের নিভিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

//আমরা কি আমাদের তারাদের ভালোবাসি না?
৩০.০৭.২০১৮

কুকুরের স্বপ্ন

একদিন স্বপ্নে দেখলাম, আমি একটা কুকুরের সাথে ডাস্টবিনের ময়লা থেকে খাবার খুটে খাচ্ছি।

কিছুক্ষন পর দেখলাম পরিচিত অপরিচিত অনেকেই এসে যোগ দিল।

এক সময় খেয়াল করলাম, ঠেলাঠেলিতে বিরক্ত হয়ে কুকুরটি খাওয়া ফেলে চলে গেল। আর এদিকে কেউ কেউ খাওয়া নিয়ে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে বলতে শুরু করেছে এলাকার অমুক ভাই তার আপন চাচা ! খাওয়া বেশি হয়ে যাওয়ায় খেতে খেতেই আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।

হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল, খেয়াল করলাম, মুখের উপর সকালের আলো এসে পড়েছে।

//কুকুরের স্বপ্ন (Dreaming on behalf of a Dog)
//০২-০২-২০১৭

হালুম এবং মালুম

স্বপ্নে দেখলাম একটা বাঘের খাঁচায় জোড় পূর্বক আমাকে ফেলে দেওয়া হল।
বাঘটি আমাকে দেখে কিঞ্চিৎ বিরক্ত হল এবং কোন প্রকার হালুম মালুম করল না ! বাঘটি নিরামিষভোজি ছিল।
আমি অপমানিত বোধ করলাম এবং রেগে ক্ষেপে বাঘের ঘাড়ে কামড় দিয়ে হালুম এবং মালুম অনুভব করলাম।
দেখি ঘুম ভেঙে গেছে, জানালা দিয়ে ভোরের সাদা আলো আভা ঢুকছে রুমে।

দৌড়

//দৌড়
তোর সাথে দৌড়াবো ভরপুর
তোর সাথে খুব দৌড়াবো
তোর সাথে ম্যারাথন দৌড়াবো
তুই সাথে থাকলে থামবো না, খুব দৌড়াবো।

তোর সাথে দৌড়াব গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে
তোর সাথে দৌড়াব শীতের কনে কনে সকালে
তোর সাথে জাপ্টাজাপ্টি হয়ে দৌড়াবো,
তোর সাথে মাখামাখি দৌড়াবো।

তোর সাথে তোর সাথে তোর সাথে
দৌড় দৌড় দৌড়, দৌড়াবো।।

//০৮/০৮/২০১৬ (অফিসে কাজের ফাঁকে)

একটা কিছুর জন্য

একটা কিছু না পাওয়ার জন্য বুকের ভেতর চিন চিনে ব্যাথা ছিল অনেক দিন
একটা কিছু পাওয়ার কথা ছিল বড্ড, পাওয়া হয়নি।
একটা কিছু পাওয়ার জন্য হাহাকার অপেক্ষা করতে করতে শেষ হয়ে গেছে
একটা কিছু সেটা বোকামি হোক কিন্তু পাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল
একটা কিছু খুব বেশি ছেলেমি হোক কিন্তু চাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল।

একটা কিছু চাওয়াপাওয়া নিয়ে একটা কবিতা লেখার কথা ছিল, হয়নি
একটা কিছুর হিসাব মেলেনি, কি মেলেনি, কেন মেলেনি সেই হিসাবও মেলেনি।

একটা কিছু পাগলামি বাকির খাতায় চলে গেল
একটা কিছু গল্প অনেক যত্নে আস্ত এক হাজার টাকার নোট হিসাবে থেকে গেল, খুচরা হল না।

একটা কিছু খুব জানা খুব চেনা কিন্তু অধরা
একটা কিছু একদম অজানা অচেনা কিংবা খুব চাওয়ার

সেই একটা কিছুর জন্য আজন্ম হাহাকার !

চলাচল

//চলাচল

সকাল সন্ধ্যা পথিকের চলাচল
মাঝে মাঝে পথিক ক্ষনিকের জন্য দাঁড়িয়ে যায়,
ডানে তাকায়, বামে তাকায় আবার ডানে তাকায়,
পথিক রাস্তা পার হয়।
পার হয়ে আসা রাস্তার ওপাশ তাকিয়ে পথিক মৃদু হাসে,
পথিকের চলাচল আবার শুরু হয়।

পথিকের চলাচলের সামনে আর পেছন নাই,
পৃথিবী যেহেতু গোল তাই পথিক যে দিক দিয়ে হেঁটে যাবে সেটাই সামনের পথ,
পথ এবং পথিকের পেছনের স্মৃতি বা ভবিষ্যই বলে কিছু নাই !
পথ এবং পথিক উভয়ের জায়গা নতুন পথ কিংবা নতুন পথিক ঠিকই জায়গা করে নেয়।

পথ একা না পথিক একা আমি জানি না, তবে উভয়ের ভেতর চলাচলের সম্পর্কটাই অকৃত্রিম !

~~ 10/04/2015, বক্সিবাজার, ঢাকা ~~

পাগল

যা পাগল তোকে মুক্ত করে দিলাম ছুটে যা ইচ্ছা খুশি
ছুঁয়ে আয় সুউচ্চ হিমালয় কিংবা ডুব দিয়ে আয় সাগরের তলা থেকে।
আষাঢ়ের ঘন বর্ষায় কাক ভেজা হয়ে ইচ্ছে হলে ঘরে ফিরিস
কিংবা ঝির ঝির বৃষ্টিতে গায়ে কাঁদা মেখে মাঝ উঠানে নাচিস তা-ধিন।
চৈত্রের খাঁ খাঁ রোদে পুড়ে মর, সারা দিন পথে হেঁটে –
এক হাঁটু ধুলোর সর পায়ে মেখে দিন শেষ ইচ্ছে হলে ঘরে ফিরিস।

যা পাগল তোকে মুক্ত করে দিলাম উড়ে যা ইচ্ছে খুশি।
আটকে থাক জ্যামের ভেতর ঘন্টার পর ঘন্টা, ঘামে ভিজে পরীক্ষা দে ধৈর্য্যের।
ইচ্ছে হলে দিন শেষে ঘরে ফিরিস ।

১৯/০৪/২০১৪, কাটাবন
~ মানচুমাহারা

তোমার জন্য

তুমি যখন ভূমিষ্ঠ হয়েছিলে যদি এক দূর্বিনীত চিল তোমাকে ছোঁ মেরে নিয়ে যেত
সবাই করত হায় হায় 🙁

তুমি যখন শিশু ছিলে যদি কোন রূপকথার ডাইনী বুড়ি তোমাকে ভুলিয়ে নিয়ে যেত
সবাই কি কান্নাটাই না কাঁদত তাই না ?

একদিন তোমার জন্য লেখা হয়েছিল রুপকথা
আজ ও আগামী তোমাকে ঘিরে লেখা হবে অসংখ্য আধুনিক কবিতা,
তোমাকে ঘিরে কত আয়োজন, তোমার জন্যই যত আয়োজন।

তোমার জন্য চেয়ে আছে পথ, তোমার জন্য অফুরন্ত আগামী।
তুমি এগিয়ে যাও , ইতিহাসে যুক্ত হোক তোমার অস্থির চলাচল।

………………………………..
উৎসর্গঃ তোমাকে
০৭-১১-২০১৩
একজন মানচুমাহারা

চাঁদ

এক খানা চাঁদ ভাগ করে নেই,
আধেকটা আমার আধেকটা তোমার।

এক খানা চাঁদ ভাগ করে নেই,
এক পাশ আমার অন্য পাশ তোমার।

এক খানা চাঁদ ভাগ করে নেই,
পুরাটা তোমার, শুধু তোমার ছায়াটা আমার !

চাঁদকে নিয়ে ভাগাভাগি চাঁদের নাইকো লাজ,
চাঁদ নিয়ে বাড়াবাড়ি, দেখ তোমার কপালে ভাঁজ।

//১৯০৯২০১৩

বিঃ দ্রঃ যদি চাঁদাবাজি করে আপনি জীবন নির্বাহ করেন তাহলে আজই উত্তম দিন চাঁদের কাছা চাঁদা চাওয়ার কারণ চাঁদের সকল মুরিদরা আজ খুবই উচ্ছশিত !

ফড়িং , নুলো বাছুড় এবং প্রজাপ্রতির গল্প

একদিন আমি তোমার দেওয়ালে একটা ফড়িং এঁকে দিলাম,
পরের দিন ফড়িং লাফাতে শুরু করল,
তুমি বললে, চুপ কর হতচ্ছাড়া !

তারপর একদিন আমি তোমার গোয়ালে একটা নুলো বাছুড় ছেড়ে দিলাম,
পরের দিন সেটি তিরিং বিরিং ছুটতে লাগল,
তুমি বললে, চুপ কর পাজি !

আমি একদিন তোমার ক্যানভাসে একটা প্রজাপ্রতি এঁকে দেব,
তুমি পারলে তাড়িয়ে দিও !

//২১।০৮।২০১৩, কাঁটাবন