নিউ নরমাল ইজ হিউম্যান শিট !

একটা সময় ধারণা করা হত hi5 এর মত ফেসবুক হুট করে হারিয়ে যাবে। বেশ আগে একটা আর্টিকেল পড়েছিলাম যেখানে বলা হয়েছিল যে আধুনিক জ্ঞান এই হুট করে হারিয়ে যাওয়া ঠেকিয়ে দিবে বা কিভাবে জায়ান্ট হয়ে অনেক বছর বেঁচে থাকা যায় সেইটা এখন মানুষ শিখে ফেলেছে। করোনা ভাইরাস এর প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে ‘নিউ নরমাল নিউ নরমাল’ বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলা হচ্ছে। এটা আমার কাছে একটা হাস্যকর বিষয় মনে হয়। দেয়ার উইল বি ন নিউ নরমাল। একটু খেয়াল করেন, এর আগে কোন প্যান্ডেমিক এর সময় এত দ্রুত এন্টিভাইরাস বা টিকা বানানোর কাজ হয়নি। করোনার টিকা প্রায় রেডি, শুধু ফাইনাল ট্রায়াল বাকি যা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমার ধারণা ফাইনাল ট্রায়াল শেষ হবার আগেই টিকা দেওয়া শুরু হবে।

যদি নরমাল বা স্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু না হয় তাহলেও কোন কোন গোষ্ঠি লাভবান হবে বিরাট স্কেলে। তাই যত বেশি নিউ নরমাল নিউ নরমাল বলে বলে মানুষের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় তত তাদের লাভ। নিউ নরমাল ইজ হিউম্যান শিট ! খুবই দ্রুতই আবার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থ্যা এই যে বলতেছে ‘দেয়ার উইল বি নো নিউ নরমাল’ কি কনফিডেন্স অথচ ভাইরাস স্প্রেডিং এর শুরুতে তাদের খোঁজ ছিল না। এটা আমার কাছে মনে হয় বৈশ্বিক রাজনীতির অংশ।

আরে ভাই ১০০ বছর আগের পৃথিবী আর এখনকার পৃথিবী এক না। পারলে আগামীকালই মঙ্গলে গিয়ে মানুষ থাকা শুরু করে। একটা ছোট উদাহরণ দেই, ধরুন প্রায় বলা হয় প্লাস্টিক দিয়ে পৃথিবী শেষ হয়ে যাচ্ছে ব্লা ব্লা। ঠিকই দেখবেন সামনে এমন কিছু মানুষ বের করবে প্লাস্টিক পচিয়ে দিবে। হয়তো প্লাস্টিক খেকো ব্যাক্টেরিয়া তৈরি করে ফেলবে। মানে ১০০ বছর আগে সমস্যা সমাধানে মানুষ যেভাবে চিন্তা করত, যত দ্রুত কাজ করত, এখন তার থেকে বেশি ইফেক্টিভ ভাবে কাজ করে, অনেক দ্রুত অনেক সমস্যার সমাধান বের করে ফেলা সম্ভব।

এখন একমাত্র অন্তরায় থাকে বিশ্বনেতাদের কারো কারো ঘাউরামি। ট্রাম্প করোনা নিয়ে শুরু থেকে সিরিয়াস থাকলে আমেরিকার অর্থনীতি ডাউন হত না। আমেরিকার অর্থনীতি ডাউন মানে কিন্তু অসংখ্য দেশের ক্ষতি। এদিকে চায়নার অর্থনীতি উন্নতি মানেই পৃথিবীতে নতুন মেরু করন। আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যসহ অনেক দেশ ধংস করে দিয়েছে তবে ওদের কাজকাম মোটামুটি ট্রান্সপারেন্ট। কিন্তু চায়না কিভাবে কাকে ধংস করবে বা পুতুল বানিয়ে রাখবে এটা কেউ জানে না। পৃথিবীর অন্য সব দেশের টিকার ট্রায়াল ডাটা পাওয়া সম্ভব কিন্তু চায়নার কোন টিকার ট্রায়াল ডাটা আপনি পাবেন না।

তো এই নিউ নরমাল কন্সেপ্ট হচ্ছে ইচ্ছাকৃত তৈরি। এখন নিউজমিডিয়াকে কাজে লাগানো হচ্ছে বার বার এটা বলে মানুষের মনের ভেতর স্থায়ী ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া।

রাস্তা থেকে কেনা আম খেয়ে দেখলাম সন্ধ্যায়, ভালোই

আমার বাসার সামনে সকাল থেকেই ছাই, ঝাড়ু থেকে শুরু করে শাক, তরকারি সব কিছুই বেচতে আসে। প্রায় প্রতিদিনই আম বেচতে আসে, আজকে একজন আসছিল আম্রপালি আম বেচতে, উপর থেকে জিজ্ঞাসা করলাম দাম কত সম্ভবত ৮৫ বা ৯০ এই রকম কিছু বলেছিল।

আমরা বাসার ভেতর দ্বিধাদন্দে ছিলাম রাস্তা থেকে এই করোনার সময়ে আম কিনব নাকি। পরে উবু ১০ কুড়ি এভাবে গুনে ঠিক হল যে যা হয় হবে, অনলাইন থেকে অনেক দামি আম কিনেছি, আজকে রাস্তার আম কিনব। এবার আবার জিজ্ঞাসা করলাম, এই দাম কত, বিকাশ নাম্বার আছে ? উত্তর আসল বিকাশ নাই কিন্তু দাম সবার কাছে যা বেচছে মানে ৭০টাকা ফাইনাল দাম। আমরা ভাবছিলাম ৮০ টাকা বলব কিন্তু সে নিজে থেকেই নাকি পাশের বাসার ভাবী দামাদামি করে ১৫/২০ টাকা কমিয়ে দিয়েছে এটা জানি না, তবে শেষমেশ ৫ কেজি কিনেছি। বাসায় থাকা একটা আমের গায়ে টাকা বেধে দিলাম ফেলে, আর বাসার দারোয়ান আম দিয়ে গেল দরজায়।

রাস্তা থেকে কেনা আম খেয়ে দেখলাম সন্ধ্যায়, ভালোই। আমার মনে হয় বাসার নিচে নেমে সামান্য আরো চাপাচাপি করলে কেজি প্রতি ৫০ বা ৬০ কেনা যেত।

বাড়ির বউকে দিয়ে চুল কাটাচ্ছে !

করোনার সময়ে সবাই কিন্তু ঘরে ঘরে সেলুন খুলে ফেলেছে। বাড়ির বউকে দিয়ে চুল কাটাচ্ছে ! যাই, হোক বউ যদিও শুধু ঘরের লোকের চুল কেটে দিচ্ছে, তাও জীবনে প্রথমবারই যেভাবে দারুন চুল কেটে দিচ্ছে তা সেলুনের চুল কাটার থেকে খারাপ কিছু না। এখন আমার কথা হচ্ছে, বাড়ির বউরা যদি ফেসবুকে শপ খুলে টুকটাক যে যেটা পারে সেটা বেচে বা শপ চালায় তাতে ক্ষতি কি ?

এক সময় ঘরে ঘরে ফেসবুক শপ বিষয়টা হাস্যকর লাগলেও এটা আসলে এখন আমার কাছে সিরিয়াস বিষয়। এটা মোটেও হাস্যকর কিছু না। ঘরে ঘরে ফেসবুক শপ আমি দোষের কিছু দেখছি না, বরং এটা প্রাচীন বিনিময় প্রথার আধুনিক প্রয়োগ। সবাইকে বড় বড় শপ দিতে হবে তা নয়। কেউ ভালো রাধতে পারেন সে রান্নার রেসিপি শেয়ার করতে পারেন, কেউ রান্না করেই বেচতে পারে। এখানে ঘরে বসে ৫০ জনের রান্না করা সম্ভব, যার এর বেশি দরকার নাই, সে প্রতিদিন ৫০ জনের রান্না বেচলেই হবে। তাহলে ৫০ জন মানুষ যার রান্নার জোগাড় নাই কিন্তু সেই ৫০জন ঘরে বসেই ঘরের রান্না খেতে পারবে। এদিকে বাইক যাদের আছে তারা এই ৫০ জনের খাবার পৌচ্ছে দিয়ে রোজগার করতে পারবে, সবাইকেই যে পাঠাও এর মত এপে খ্যাপ মারতে হবে তা না। এখানে কেউ টাকার বিনিময়ে রান্নার স্কিল বিনিময় করছে, কেউ তার বাইক চালানোর সময় বিক্রি করছে। আমি আবারও বলছি সবাইকেই বিশাল বড় দোকান এর দরকার নাই, কেউ চাইলে সেটা আলাদা বিষয়। আমরা সবাই জানি সব উদ্যোগ বড় হয় না কিন্তু কোন কোনটা হয়।

আমি একটা অনলাইন শপ থেকে মাঝে মাঝে অর্ডার দেই, ওদের শপে সব কিছু নাই। যা নাই তা আমি অর্ডার এর সাথে নোট আকারে লিখে দেই। অনেক সময় দেখা যায় ওদের শপে যা অর্ডার দিয়েছে তার চার গুন আইটেম আমি লিখে দিয়েছি। পরের দিন ওদের বাইকার সকাল ১০টার দিকে ফোন দিয়ে কনফার্ম করে আর কি কি পাওয়া যাচ্ছে না বা ব্যতিক্রম থাকলে বলে। আমি আজকে গত দিন যে ডেলিভারি দিয়েছিল তার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করেছি কিছু কাস্টম আইটেম এর জন্য। আমার কাছে মনে হচ্ছে বিষয়টা অফলাইন অনলাইন মিক্সড একটা সামাজিক বিজনেস মডেল দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। অনেকের পক্ষেই বেকার থাকা কঠিন হয়ে যাবে যদি সে সামান্য ব্রাহ্মনত্বকে দূর করতে পারে।

এখানে একটা বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই যে সামাজিক কেনাবেচার নেটওয়ার্ক তৈরি হচ্ছে এটা কিন্তু বিশ্বাস এর নেটওয়ার্ক হতে হবে। আপনি কাউকে ঠকাচ্ছেন মানে এটা নয় যে শুধু আপনি আপনার ব্যবসা নষ্ট করছেন, আপনি আপনার মত আরো যারা ব্যবসা করে সবাইকে ঠকাচ্ছেন।

আমি প্রতিবছর বাসার আশেপাশের স্থায়ী হকারদের কাছ থেকে আম কিনি যারা সারা বছর বাসার আশেপাশে কিছু না কিছু বেচে এবং আমার চেহারা দেখলে চেনে(মানে প্রয়োজনে বাকি দিতেও দিধা করে না)। এরা আমাকে কোনদিনও খারাপ আম দেয় না। কিন্তু এই বছর ৩টা ফেসবুক শপ থেকে আমি আম কিনেছি কারো কাছ থেকেই আমি ১০০% ভাল আম পাইনি যদিও ভালো আম বলতে যেমন দাম হওয়া উচিৎ প্রত্যেককেই আমি যেমনই দাম দিয়েছি। আমি আগামীবছর আবার রাস্তা থেকেই আম কিনব ঠিক করেছি। আমি রাস্তা থেকে নিজে কেটে খেয়ে বেছে বেছে কিনে আনতে পারি। অনলাইন থেকে আম কেনার যে বিশ্বাস সেটা কেউ না কেউ নষ্ট করল আমাকে খারাপ আম পাঠিয়ে।

ছাই

প্রায় আমাদের বাসার সামনে এক মহিলা ফেরি করে ছাই বেচতে আসেন কিন্তু উনি এত কর্কশ ভাবে ছাই ছাই বলে চিৎকার করেন তাতে ছাই কেনার ইচ্ছাটাই মারা যায়। তাই চেস্টা করলাম ছাইকে একটু জাতে উঠাতে আর সেই সাথে আমার ছাইছাপা কন্ঠের গুনগান শোনাতে।

করোনার সময়ে সমস্যা এবং চিন্তাঃ রেগুলার টিকাদান কর্মসূচী

করোনার কারণে শিশুদের রেগুলার টিকাদান কর্মসূচীর সাথে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। সরকারি অনেক হাসপাতালে দেওয়া যায় এখনো কিন্তু সেটা সবার জন্য ওয়াকিং ডিসট্যান্স হবে না এবং শিশুকে বেশি দূরে নিয়ে যাওয়া বেশি যুকি পূর্ণ। মিল্ক ভিটা যেভাবে বাসার সামনে দুধ নিয়ে হাজির হচ্ছে, সেই ভাবে টিকাদান এর জন্য ভ্রাম্যমান গাড়ি ব্যবহার করে বাসার সামনে এসে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা জরুরী। অন্তত ঢাকা বা শহরাঞ্চলে। টিকাদান কর্মসূচীর সাথে অনেক গুলো এনজিও জড়িত, তাদের এখনি অলটারনেটিভ কর্মসূচী বা ভ্রাম্যমান কর্মসূচী নেওয়া উচিৎ। পোলিও এবং এই ধরনের টিকা কর্মসূচী বাধাগ্রস্থ হলে এই অঞ্চলে এই রোগ আবার ফিরে আসবে।

করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক চিন্তাঃ -১

করোনা পরবর্তী সময়ে প্রতিটি দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিবে। আমি একাউন্টিং অভিজ্ঞের মত বুঝি না তবে আয় আর ব্যয় বুঝি। যদি আয় বাড়ানো না যায় তাহলে ব্যয় কমিয়ে এটা নিয়ন্ত্রন করা যায়। আবার আয় যদি স্থির থাকে তাহলে ব্যয় কমিয়েও মন্দা কমিয়ে আনা সম্ভব। ব্যয় কমানো মানে যে কম কনজিউম করা তা না। দেশের সাপেক্ষে যদি বাইরে থেকে কিছু কিনি বা আমদানী করি তাহলে সেই ব্যয় আর দেশের ভেতরে কিছু কেনাকাটা আলাদা বিষয়।

প্রতি বছর চিকিৎসার জন্য প্রতিবেশী দেশ ইন্ডিয়াতে অনেক মানুষ যায়। আর যাদের কাঁচাপাকা টাকা আছে তারা আরো উন্নত দেশ বা চিকিৎসা সেবার জন্য অন্য দেশ গুলোতে যায়।

করোনার পরে যদি স্বাস্থ্য খাতে উন্নতি করা যায়, দূর্নীতি কমিয়ে সেবার মান, পরিবেশ উন্নত করা যায় তাহলে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া কমিয়ে আনা সম্ভব। বৈদেশিক মুদ্রা আয় আর দেশের মুদ্রা বিদেশে না নিয়ে যাওয়া কিন্তু অনেকটা একই রকম ব্যাপার। তো চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যয় কমিয়ে আনা যায় বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া বন্ধ করা যায় তাহলে সেটা দেশের অর্থনীতির জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে।

এটা করার জন্য প্রথমে দরকার দেশ যারা চালান তারা যদি আগামী ৫ বছর কোন রকম চিকিৎসার জন্য ভিন্ন দেশে না যান এবং সরকারি হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসা নেন। আরো ভালো হয় দেশের সরকারি হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসা নেওয়ার সময় যেন কোন রকম ভিআইপি সুবিধা না নেন। সাধারণ নাগরিক যেভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কেটে চিকিৎসা নেন, সাধারণ নাগরিক যেভাবে জেনারেল ওয়ার্ডে বা বেডে থাকেন সেই ভাবে। প্রতিটি সরকারি হাসপাতাল এবং বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ভিআইপি ওয়ার্ড বা বেড সরিয়ে ফেলতে হবে।

বিঃ দ্রঃ ‘করোনা পরবর্তী অর্থনীতি’ হচ্ছে বর্তমান সময়ের হটটপিক

Wrote in facebook here

বড় মোরগ ভাবনা

সংগীত শিল্পীরা যদি ইউটিউবে পুরা আল্বামের ব্দলে একটা একটা করে গান রিলিজ দিতে পারে তাহলে একজন কবি কেন এক লাইন এক লাইন করে বা একজন লেখক কেন এক প্যারা এক প্যারা করে প্রকাশ করতে পারবে না ?

এমনকি একজন সংগীত শিল্পীর একটা গানের প্রকাশনা অনুষ্ঠান পর্যন্ত যদি হতে পারে একজন কবির কবিতার একটা লাইন প্রকাশনা অনুষ্ঠানও হতে পারে। সবাই এসে ঐ এক লাইন নিয়ে আলোচনা করবেন, এক লাইন কবিতা আবৃত্তি শুনবেন।

২০২১ সালের বই মেলা উদ্দেশ্য করে ‘বড় মোরগ’ নামে যে গল্প গ্রন্থ আমি লেখার উদ্যোগ গ্রহন করেছি এটার প্রথম প্যারা লেখা হলেই আমি প্রকাশনা অনুষ্ঠান এর আয়োজন করব। আপনাদের কিন্তু আসতেই হবে।

যখন ইউটিউবে একটা একটা গান রিলিজ হওয়া শুরু হল অনেকে নাক উচু করে এটা নিয়ে কথা বলত, এখন কিন্তু গা শয়ে গেছে। আমার গল্প গ্রন্থের প্যারা প্রকাশনা নিয়েও মানুষ শুরুতে কথা বলবে কিন্তু পরে দেখবেন সবাই এটা ফলো করা শুরু করেছে। একজন কবি ১২ মাসে ১২ লাইন লিখে তার কবিতার ইতি টানবেন, একজন গদ্যকার ১২ মাসে ১২ প্যারা লিখে বই ফাইনাল বান্ডিংয়ে দিবেন।

আমার ভবিষ্যত ‘বড় মোরগ’ গ্রন্থের প্রথম প্যারা লেখা শেষ হলে কারা কারা প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে চান আগে থেকে জানাবেন, আমি ইচ্ছা করেই আসন সংখ্যা সীমিত রাখব। কাছের বন্ধুদের জন্য টিকেট হাফ, দূরের বন্ধুদের জন্য ২০% ডিসকাউন্ট দেওয়া হবে, শত্রু এবং হিংসুটেদের জন্য ১০০% ফ্রি থাকবে।

সবজি, ভালোবাসা এবং সংসার

//সবজি, ভালোবাসা এবং সংসার

একদিন ফুলকপির সিজন শেষ হবে,
আমরা অন্য কোন ফুল দিয়ে ভালোবাসব।
একদিন বাঁধাকপির সময় বিদায় নেবে,
আমরা অন্য কিছু দিয়ে বাঁধব।

এই যে এখন পুরাতন আলুকে পেছনে ফেলে
নতুন চকচকে আলুর ছড়াছড়ি,
আহা, আর দুটো দিন দেরি কর, আমাদের
ছানাপোনা ঘরের মেঝেতে দিবে হামাগুড়ি।

২২ জানুয়ারি, ২০২০

ঢাকা -২০২০ মেয়র ইলেকশনে আমি কেমন মেয়র চাই

ঢাকা দক্ষিন/উত্তরের মেয়র হিসাবে আমি কোণ সময় সুপারহিউম্যান টাইপ কাউকে আশা করি না। আমি খুব স্বাভাবিক একজন মানুষ আশা করি যিনি

১। রাতে ঘুমানোর আগে মশার ভয়তে মশারি টাঙিয়ে ঘুমান
২। সামান্য বৃষ্টি হলে যার বাসার সামনে হাটু সমান পানি জমে
৩। রাস্তার গর্তে হোচট খেয়ে যার বউ/হাজবেন্ড এর পা মচকে যায়
৪। যার ছেলে মেয়ে পার্কের অভাবে বাসার ভেতর খেলে
৫। যিনি বাসার পাশের পার্টি সেন্টার এর নাচ গানের শব্দে মাঝ রাত অবধি ঘুমাতে পারেন না
৬। যিনি সকালে পাবলিক বাসে করে নগর ভবনে যাবেন এবং দিন শেষে পাবলিক বাসে বাসায় ফেরার পথে এলাকার নোংরা কাঁচা বাজার থেকে আলু পটল কিনে ফিরবেন।
৭। যিনি প্রতিবছর বাড়িওয়ালা ভাড়া বাড়ালে হয় মুখ বুঝে এডজাস্ট করেন না হয় কম ভাড়ার বাসায় চলে যান।
৮। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অসংখ্য সাধারণ মানুষের মত অসাধারণ ধৈর্য নিয়ে শহরে বসবাস করে বেচে থাকেন।
৯। ব্লা ব্লা …

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের অসম বণ্টন(প্রথম আলো)

মিলন (ছদ্মনাম) একটি নিয়োগ পরীক্ষার ভাইবা দিতে গেল। সে নড়াইলের ছেলে। তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে রাজধানী ঢাকা জেলা থেকে ৬৩তম জেলা নড়াইল কত বছর পিছিয়ে? মিলন কী উত্তর দেবেন?

আসুন আমরা উত্তর খুঁজি।

২.
তৃতীয় শিল্পবিপ্লব ছিল ইন্টারনেট দিয়ে। ইদানীং আমরা চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে আলোচনা করছি, বিভিন্ন পরীক্ষা এবং ভাইবাতে এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হট টপিক! আর একটা খুব সাধারণ কথা আমরা বলি তা হচ্ছে, আমরা আমেরিকা থেকে ১০০ বছর পিছিয়ে। এই ১০০ বছর কিন্তু সম্পূর্ণ বাংলাদেশ পিছিয়ে না। তৃতীয় শিল্পবিপ্লব শুরু ১৯৬৯ সালে। বাংলাদেশে ভিস্যাট দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু ১৯৯৬ সালে। তার মানে বাংলাদেশ তৃতীয় শিল্পবিপ্লব বা ইন্টারনেটের সুযোগ থেকে কমবেশি মাত্র ২৭ বছর পেছনে। এখন প্রত্যেকে যার যার জেলা শহরে কত সালে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এসেছে, হিসাব করুন আর বের করুন আপনার শহর তৃতীয় শিল্পবিপ্লব থেকে কত বছর পিছিয়ে। পেশাদার কাজে মোবাইল ইন্টারনেটকে আমি আলোচনার বাইরে রাখছি। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব শুরু হয়ে গেছে কিন্তু ঢাকা, চট্টগ্রামের বাইরে খুব কম জেলা শহরেই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছেছে, ইউনিয়ন বা গ্রাম আরও দূরে। ঢাকা জেলার সবগুলো গ্রামে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গিয়েছে কি? না, যায়নি। যাঁরা ঢাকার আশপাশে বেড়াতে যান বা সেখানে থাকেন, তাঁরা ব্যাপারটি জানেন।

শুধু ভৌগোলিক অবস্থানের ভিন্নতার কারণে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের লভ্যতার এই তারতম্য খুব বেশি চোখে পড়ার মতো। বাংলা লায়ন এবং কিউবি ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট সেবা ঢাকার বাইরে বেশ কিছু শহরে নিয়ে গেলেও এখন তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে প্রায়। অন্যদিকে সরকারিভাবে ইউনিয়ন পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার টেনে নেওয়ার প্রকল্প খুবই ধীরগতিতে এগোচ্ছে। প্রোগ্রামিং ছাড়াও অসংখ্য ইন্টারনেটভিত্তিক চাকরির সুযোগ আছে, যা দেশের যেকোনো প্রান্তে বসে যে কেউ করতে পারে। তার জন্য দরকার দ্রুতগতির ইন্টারনেট। আর এই সেবা দেশের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছানো খুবই জরুরি। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রযুক্তির অসম বণ্টন আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে অনেক বেশি। আগামী দিনগুলোতে প্রযুক্তি পণ্য (সফটওয়্যার) এবং প্রযুক্তিভিত্তিক ভার্চু্যয়াল সেবাই হবে রপ্তানি বাণিজ্যের মূল হাতিয়ার আর তার জন্য দ্রুতগতির ইন্টারনেট গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত দ্রুত পৌঁছানো খুবই জরুরি। আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি একটা গ্রামে পাকা রাস্তা আর দ্রুতগতির ইন্টারনেট সমান গুরুত্ব পাওয়া উচিত।

৩.
ইন্টারনেট হচ্ছে এমন একটা মাধ্যম, যা ব্যবহার করে পেশাদার কাজ করার জন্য বড় কারখানা লাগে না বা অনেক লোকবলও লাগে না। একটা কম্পিউটার বা ল্যাপটপ হলেই চলে। কিন্তু আমরা দেখছি ঢাকায় থাকার কারণে একজন যে সুবিধা পাচ্ছেন, গ্রামে বসে আরেকজন সেই একই সুবিধা পাচ্ছেন না। আসলে কিছুই তিনি পাচ্ছেন না। আমরা নিয়োগপ্রত্যাশী মিলনের শহর নড়াইলের কথা বিবেচনা করতে পারি। নড়াইলের আশপাশে গোপালগঞ্জ এবং যশোরে একটি করে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। মিলনের চার বন্ধু যদি গোপালগঞ্জ বা যশোরের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ইন্টারনেটভিত্তিক কাজ নড়াইলে বসে করতে চান, তাহলে তাঁরা সেটি পারবেন না। কিন্তু মিলনের অন্য চার বন্ধু ঢাকায় এসে বা ঢাকায় থেকে কাজটি করতে পারছেন। তার মানে মিলনের নড়াইলের চার বন্ধু শুধু ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঢাকায় আসতে বাধ্য হচ্ছেন। আরও সহজভাবে চিন্তা করলে ঢাকার বাইরে গোপালগঞ্জ বা যশোরের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করলেও পড়া শেষে সবাই আবার ঢাকায় আসতে বাধ্য হচ্ছে! আমরা গ্রামে ডাক্তার পাঠাতে চাই ‘জোর’ করে, কিন্তু গ্রামে আমরা ইঞ্জিনিয়ার পাঠাতে চাই না কেন?

৪.
মিলন ইন্টারনেট ব্যবহার শিখেছেন ২০০২ সালে, তখন তিনি ইন্টারনেটে যা দেখতেন, তা–ই বিশ্বাস করতেন। দীর্ঘদিন ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে তিনি শিখেছেন এখন ইন্টারনেটে পাওয়া তথ্য অবশ্যই যাচাই করে নেওয়া উচিত। মিলনের শাশুড়ি থাকেন নড়াইল জেলা শহরে, তিনি সম্প্রতি স্মার্টফোন ব্যবহার করা শিখেছেন এবং ইন্টারনেটে (মোবাইল ইন্টারনেটে ফেসবুক) যা দেখেন তা–ই বিশ্বাস করেন। ইন্টারনেট ব্যবহারের পাশাপাশি নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার শিখতে মিলনের প্রায় এক দশক চলে গেছে, মিলন আশাবাদী যে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এক দশক পার হলে তাঁর শাশুড়িও নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কে শিখে যাবেন! মিলনের ছোট চাচা থাকেন গ্রামে। তিনি মাঝেমধ্যে মিলনের কাছ থেকে কীভাবে ইন্টারনেটে ফেসবুক চালাবেন, সেই বিষয়ে পরামর্শ নেন। মিলনের চাচাতো ভাই গ্রামে বসে ইউটিউব থেকে ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখে ওয়েব ডিজাইন শেখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু মোবাইল ইন্টারনেটের অনেক দাম আর দ্রুত মেগাবাইট শেষ হয়ে যায়। মিলন ঢাকাতে দ্রুত গতির আনলিমিটেড ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করেন আর তাঁর চাচাতো ভাই প্রতিদিন মেগাবাইট কেনেন! মিলন তাঁর চাচাতো ভাইকে গ্রাম থেকে ঢাকায় আসার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত, গ্রামে বসে মোবাইল ইন্টারনেটের এমবি দিয়ে কিছু হবে না।

৫.
একদিন আমাদের পদ্মা সেতু হবে। প্রতিবার নড়াইল থেকে পদ্মা পাড়ি দিয়ে ঢাকায় ফেরার সময় মিলন চিন্তা করেন, সেতুটা শেষ হলেই চার ঘণ্টায় তিনি ঢাকা থেকে নড়াইল যেতে পারবেন। চাকরিটা যদি না হয় আর ২০২০ সালে যদি নড়াইলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হয়, তাহলে তিনি নড়াইলে ফিরে যাবেন। সেখানে বসে ইন্টারনেটভিত্তিক ফ্রিল্যান্স কাজ করবেন আর তাঁর স্বপ্নের প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নড়াইলেই শুরু করবেন।

মিলন কি পারবে গ্রামের বাড়িতে জানালার পাশে বসে পাখির ডাক শুনতে শুনতে ল্যাপটপ দিয়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করে ইন্টারনেট মার্কেটিংয়ের কাজ করতে? আর তাঁর চাচা তাঁদের বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হাঁক দেবে, ‘কি বাবা গ্রামে বসে ভালোই তো ডলার কামাচ্ছ, এবার বিয়েশাদিটা সাইরে ফেলো!’

সবুজ কুন্ডু তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা, প্রতিষ্ঠাতা কোড বক্সার

বিঃ দ্রঃ লেখাটি প্রথম আলোতে ছাপা হয়েছিল