একদিন এক অংক ক্লাসে স্যার ছাত্রছাত্রিদের বৃত্ত সম্পর্কে পড়ানো শুরু করলেন। তিনি বিন্দু, বৃত্ত ইত্যাদি বিষয়ে পড়ালেন কিন্তু ছাত্রছাত্রিরা কিছুতেই বুঝতে পারছে না। স্যারও পড়লেন বিপদে। এমন সময় হঠাৎ করে ক্লাসের জানালাতে একটা গরু ফিক করে হেসে দিল। স্যার হুংকার দিয়ে বলল, কে ওখানে, কে হাসে রে ?
গরু মুখ কাচুমাচু করে স্কুলের জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে বলল, “স্যার আমি গরু !”
স্যার বল্লেন, “বুঝলাম তুই গ্রু কিন্তু মাঠে ঘাস না খেয়ে তুই এখানে কি করিস আর এমন ফিক করে হেসে দিলি ক্যান ?”
গরু বলল, “আজকে আমার মালিক ঠিক মত আমার গলার দড়ির সাথে যুক্ত খুটো মাটিতে পুতে দেয় নাই তাই আমি ছাড়া পেয়ে স্কুলে আসছি পড়ালেখা করতে। এসে জানালায় উকি দিতেই দেখি আপনি বৃত্ত পড়াচ্ছিলেন কিন্তু ছাত্রছাত্রিরা বুঝতে পারছে না দেখে হেসে দিলাম। এতো সহজ একটা বিষয় এরা বুঝতে পারছে না !”
স্যার কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বল্লেন, “বটে ! তা তুই কি পারবি বৃত্ত কি বুঝাতে ?”
গরুটা ঠিক এই সুযোগ এর অপেক্ষায় ছিল। প্রতিদিন মাঠে ঘাস খেতে খেতে সে ক্লান্ত। সে সমাজিক কর্মকান্ডে অংশ নিতে চায়। গরু বলল, “অবশ্যই পারব স্যার তবে তার জন্য সবাইকে যেতে হবে মাঠে।”
স্যার ছাত্রছাত্রিদের নিয়ে গরুর পেছন পেছন মাঠে গেলেন। মাঠের মাঝ খানে গিয়ে গরু বলল, ‘স্যার এবার আমার গলার দড়ির সাথে যুক্ত খুটোটা মাটিতে ভালো করে পুতে দেন’। স্যার তাই করলেন আর এবার গরু শুরু করল বৃত্ত পড়ানো।
… এই খুটোটা মাটিতে যে গর্ত তৈরি করল এটা হল বিন্দু। এখন আমি এই খুটো থেকে সবোর্চ দুরত্ব যতদূর দড়ি যাবে সেই বরাবর ঘাস খাব। দেখতে দেখতে গরু ঘাস খেতে খেতে মাটিতে পুতে রাখা খুটোর চারপাশে একটা পাক দিয়ে দিল। তৈরি হয়ে গেল বৃত্ত। গরু হাফাতে হাতে বলল, এই যে খুটো থেকে দড়ি টান টান রেখে আমি যে বরাবর খাস খেলাম এইটা একটা বৃত্ত তৈরি হল। আর আমার দড়ির দৈর্ঘ হল এই বৃত্তের ব্যাসার্ধ। এই রকম দৈর্ঘের দুইটা দড়ি মিলালে হবে ব্যাস। আর আমি যে বরাবর ঘাস খেলাম সেইটা হচ্ছে পরিধি …
ছাত্রছাত্রিরা হাত তালি দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করল। এখন বৃত্ত, বিন্দু, ব্যাসার্ধ, পরিধি সব স্বচ্ছ পানির মত পরিস্কার সবার কাছে। স্যারও গরুকে বাহবা দিল। “ঘাস খাওয়া থেকে যদি ভালো কিছু হয় হোক তবে …”
গরুকে বিদায় জানিয়ে স্যার যখন ছাত্রছাত্রিদের নিয়ে ক্লাসে ফিরে যাচ্ছিলেন, গরুটা তখন তার গলার দড়ির সাথে যুক্ত খুটোটা আবার উন্মক্ত করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করল। কিন্তু সেই অনুরোধ না রেখে সবাই আবার ক্লাসে ফিরে গেল।
উৎসর্গঃ যে সকল শিশুদের খেলার মাঠ নেই, যাদের স্কুলের মাঠে গরু চড়ে না, যারা স্কুলের জানালা দিয়ে মাঠে গরু চড়ানো দেখতে পারে না …