ঘটনা-১ঃ একটা চামড়ার বেল্ট পরিধান করি বেশ কিছু বছর। ব্যবহার করতে করতে কিছু কিছু জায়গায় রং উঠে সাদা হয়ে গিয়েছিল কিন্তু বেল্ট ভালো আছে। অনেক দিন ধরে বেল্টটাকে রং করানোর চিন্তা করতেছিলাম কিন্তু খয়েরি রং ছিল না আশেপাশে যারা জুতা সেলাই এবং পালিশ এর কাজ করে। এক সময় বেল্ট কোমরে জড়ানো ছাড়াও অনেক ব্যবহার ছিল। বেল্ট দিয়ে শ্রমিকদের পেটাতো মালিক শ্রেনী, সেই পাশবিক দিন গুল পেছনে রেখে পৃথিবী এখন অনেক এগিয়ে। ছোট বেলায় দুই একটা বাংলা সিনেমায়ও কোমরের বেল্ট খুলে পেটানোর দৃষ্টি দেখেছি। বেল্টকে চাবুক হিসাবে ব্যবহার হত আদি কালে। যাই হোক, সেই দিন এখন আর নাই।
বেল্টও রং-পালিশ করা যায়। আমাদের এশিয়ান কালচারে কোন কিছু চরম মাত্রায় ব্যবহার অনুপযোগী না হওয়া পর্যন্ত আমরা যে কোন কিছুই ব্যবহার করে অভ্যস্থ। যাই হোক, আজকে সকালে বাসা থেকে বের হয়েই দেখলাম বাসার সামনে কালিদাশ বাবু আশেপাশের বেশ কয়েক বাসার জুতা নিয়ে বসছে কালি করার জন্য আর তাকে ঘিরে কাজ দেখছে আশেপাশের বাসার দারোয়ানরা (আধুনিক সমাজে উনাদের সিকিউরিটি গার্ড বলে তবে একক মালিত চালিত বাসা গুলোতে এক ব্যক্তিকে দিয়ে বাসার সিকিউরিটি থেকে শুরু করে বাসার বাজার করানো এবং পারলে গা টেপানোর কাজও অনেকে করান)। আজকে শ্রমিক দিবস এর ছুটি থাকলেও কালিদাশ বাবু ছুটি নেননি। উনার নাম সত্যি সত্যিই কালিদাশ (মজিদ চাচা না :P) যা আমি তাকে কাজ শেষে টাকা দেওয়ার আগে জিজ্ঞাসা করে জেনেছি। যেহেতু দারোরান সবাই আমাকে চেনে তাই তারা আমার কাজটা আগে করায়ে দিয়েছে। চামড়ার বেল্ট খানা রং করাতে পেরে শ্রমিক দিবসের প্রাক্কালে আমি বেশ খুশি। আজকে আমার অফিস ছুটি নাই, আসলে এই ছুটি ঈদের ছুটিতে দিয়েছিলাম কারণ আজকে একটা বিশেষ দিন তাই শ্রমিক দিবসে কোডবক্সার এর ছুটি থাকে না(আগে থাকলে এখন থেকে থাকবে না, এই ছুটি আগে বা পরে দেওয়া হবে)। আজকে কি বিশেষ দিন এটা পরে জানাবো।
ঘটনা-২ঃ সকালে নাস্তা করার জন্য গেলাম দাওয়াত-ই-ঢাকা নামের একটা রেস্টুরেন্টে। রেস্টুরেন্টের নামের অর্থ কি এটা ক্যাশেতে যিনি বসেন তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম কিন্তু উনি বলতে পারেন না। সম্ভবত অর্থ হচ্ছে, ‘ঢাকার দাওয়াত’।
যাই হোক, রেস্টুরেন্টের ভেতরে কাস্টমারে ঠাসা, এরা ঈদের পর গতকাল থেকে খুলেছে। এই শ্রেনীর রেস্টুরেন্টগুলোকে আমি বলি জমিদারি রেস্টুরেন্ট। এরা ঈদের আগের দিন পর্যন্ত চালায় এবং ঈদের ১৫-২০ দিন পর আসে, পারলে ঈদুল ফিতরে গিয়ে ঈদুল আযহার পরে খুলে। রেস্টুরেন্টের বাইরেও অনেক লোক পার্সেল নিবে বলে দাঁড়ানো ছিল। আমি ভীর ঠেলে ভেতরে গিয়ে বসলাম। আগে যারা খেয়ে গেছে ঐ টেবিলে তাদের রেখে যাওয়া প্লেট তখনোও ছিল। আমি তিনটা প্লেট এক জায়গায় করে দিলাম নিজ উদ্যোগে ভাবলাম যদি এতে কিছুটা পরটা পাওয়ার গতি বাড়ে। শ্রমিক দিবসের দিনেও প্রচন্ড কর্ম ব্যস্ত ওয়েটার একজন এসে সেই তিনটা প্লেট না ধুয়ে শুধু মুছে রেখে দিল সামনে নতুন কাউকে পরটা দেওয়ার জন্য। ওরা নাকি যে বাটিতে মানুষ সব্জি খায় সেটা পানি দিয়ে বার বার ধুয়ে ফেলে কিন্তু যেটাতে পরটা খায় সেইটা নাকি বার বার মুছে মুছে দেয় বা দিন শেষে একবার মুছে !
অনেকক্ষন বসে থাকার পর ধৈর্য্য হারিয়ে উঠে পরলাম। এই রেস্টুরেন্ট ছিল সাইড রোডে। মেইন রোড সংলগ্ন বছরের ৩৬৫ দিন ২৪ ঘন্টা চলা দুইটা রেস্টুরেন্ট আলম আর আমজাদ দেখলাম বন্ধ ! তখন আমার খেয়াল হল কেন দাওয়াত-ই-ঢাকা আজকে এত ফায়ার হয়ে আছে। কিন্তু ধৈর্য্য হারিয়ে যেখান থেকে উঠে আসছি সেখানে আবার ফেরত যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে ইগোর কারণে আর গেলাম না। যদিও আমাদের দেশে এই রকম ঘটনা অহরহ ঘটে। অনেক সময় ইচ্ছা না থাকলেও একই জায়গায় আমরা নিরুপায় হয়ে বার বার যাই সার্ভিস নিতে। আমাদের পরিবার কিংবা সমাজ জীবনেও একই ঘটনা ঘটে। পরে সামান্য হেটে অন্য একটা গলিতে খুবই কম ভীর আছে এমন একটা জায়গা থেকে নাস্তা সেরে অফিসের দিকে রওনা হই। পেটের ধান্ধায় আসলে আমাদের কাজ করা লাগে, পেটই আমাদের চালায়
মেধা ভিত্তিক কাজ যারা করে তাদের আমি শ্রমিক বলি না এবং আমার জানা জ্ঞানে তারা শ্রমিক না, যারা শ্রম ভিত্তিক কাজ করে তাদের শ্রমিক বলা হয়। মেধা ভিত্তিক কাজে মেধার পাশাপাশি কায়িক শ্রমও দেওয়া লাগে এটা সত্য।
সবাইকে মহান মে দিবস বা শ্রমিক দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।