এখন অনেক রাত, না ঠিক অনেক রাত নয়, রাত জেগে ভোর এসে হাজির প্রায়। জানালা দিয়ে হালকা কুয়াশা গায়ে ভোর এসে উঁকি দিচ্ছে। হঠাৎ ইচ্ছা হলো ব্লগিং নিয়ে কিছু লিখি। বাংলায় ব্লগিং খুব বেশি দিন শুরু হয়নি। বলা যায় ইউনিকোড চালু হবার পরই বাংলায় ব্লগ লেখা শুরু করেছে অনেকেই। এর আগে ইংলশ ছাড়া উপায় ছিলো না।
আমি প্রথম ব্লগ শব্দটার পরিচিত হই ইয়াহু৩৬০ ব্লগের মাধ্যমে, আমার রুমের প্রাক্তন বড় ভাই দেখিয়েছিলেন এটা। এর পর ব্লগ স্পট, ওয়ার্ড প্রেস ইত্যাদির সাথে সাক্ষাৎ হয়। একদিন প্রথম আলোতে দেখলাম সামহোয়ারের কথা। আগ্রহ একটা নিক খুললাম(সামহোয়ারে আমার এখনকার নিক মানচুমাহারা, আগে অন্য নিক ছিলো)। প্রথমে বুঝতাম না ব্লগে কি লিখে, কি লিখবো, বা কি লেখা উচিৎ। একটা দুইটা লাইন ছড়া মতো লিখে পোস্ট দিই। বেশ মজা, অনেকেই কমেন্ট করে। মাঝে মাঝে কেউ বকুনি দেয় যে চেস্টা করতে কিছু ভালো লেখার জন্য, হাবিজাবি লিখে হোম পেজে জায়গা দখল না করতে। আমি চেস্টা করতাম এরপর আমার সাধ্যমত ভালো লেখার। উল্লেখ্য আমি ভালো লেখক নই। যান্ত্রিকতায় যখন অস্থির হয়ে যাই তখনই পেট থেকে(মাথা নয়, আমি পেটই বলবো) কিছু মিছু লেখা বের হয়, তা খুবই সাধারন।
ব্লগিং প্লাটফর্ম মনে হয় বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। পরিচিত ধারের কাছে দুইটা শব্দ আসছে এক, সামাজিক ব্লগি যেমন-সামহোয়ার,প্যাঁচালী দুই, ব্যক্তিগত ব্লগি যেমন-ইয়াহু ৩৬০(এই বছরের শেষ নাগাদ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে খুব সম্ভবত, তবে নতুন কিছু নিয়ে আসবে,খুবই মিস করবো যদি এটা বন্ধ হয়ে যায়),ব্লগস্পট,ওয়ার্ডপ্রেস ইত্যাদি।
আমার মনে হয় ব্লগে কি লিখবো তা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। যেমন-এটা যদি সামাজিক ব্লগিং হয় তবে লেখার বিষয়, পরিধি ইত্যাদির সাথে ব্যক্তিগত ব্লগিং এর লেখার বিষয়, পরিধির বিস্তর না হলেও বেশ ফারাক থাকা উচিৎ। আমি কি লিখছি, কেন লিখছি, কার জন্য লিখছি (নিজেও নিজের লেখার পাঠক হওয়া যেতে পারে) এই সব খুব না হলে বেশ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিৎ বলে আমি মনে করি। সামাজিক ব্লগে যা প্রকাশ করা যায় তা সহজে ব্যক্তিগত ব্লগে প্রকাশ করা যায় কোন চিন্তা না করেই। তবে সামাজিক ব্লগে অনেক কিছু লেখা উচিৎ নয় যা ব্যক্তিগত ব্লগে লেখা যায়। আমি মনে হয় ‘ইক‘ আর ‘গত‘ বেশি ব্যবহার করে ফেলছি।
ব্যক্তিগত ব্লগে বঊয়ের সাথে দিনে ক‘বার ঝগড়া হয় কিংবা আমার ভেলপুরি খেতে খুব ভালো লাগে,সারা দিনে কি করলাম ইত্যাদি সবই লেখা যেতে পারে। তবে বড় প্লাটফরম বা সবার জন্য কমন ব্লগে এটার কিছু বাধ্যবাধকতা থাকা উচিৎ। আমার যদি আমার ব্যক্তিগত ব্লগে ‘মোস্তফা জব্বার‘কে কষে গালি দেই কেউ কিছু মনে করবে না। কিন্তু এটা যদি ওপেন ব্লগে দেই তাহলে সবার দৃষ্টিগোচর হবে।
সামাজিক ব্লগ বা ওপেন ব্লগ প্লাটফর্ম যে অনেক বড় একটা সেতু বন্ধন গড়ে দেয় সবার ভেতর তার একট ছোট্ট উদাহরণ হলো সামহোয়ারের সবাই মিলে প্রাপ্তি নামে একটা ছোট্ট শিশুর চিকিৎকার খরচ যোগাড়ের জন্য কাজ করেছিলো। যদি পাঁচটা প্রত্রিকা সাংবাদিক তাদের সংবাদ গুলো ব্লগে দিয়ে দেয় তাহলে এক জায়গায় সব সংবাদ পাওয়া যাবে।
সামাজিক ব্লগ সামাজিক অস্থিরতা তৈরির জন্য বেশ ভালো ভাবে কাজ করতে পারে। এখানে থেকে দলাদলি, পোস্ট টপ রেটেড করার জন্য ক্যনাভাস, অসংখ্য ফেক নিক খোলা, গালাগালি,রাজাকার-মুক্তিযোদ্ধা ইস্যু ইত্যাদি বেশ ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে যেতে পারে। কারণ যে ব্লগ লিখছে তার পরিবারের কেউ এটা পড়তে পারে, তার বন্ধুরা এটা পড়তে পারে। বাচ্চারা অনেক অশালীন লেখা ও ছবির সামনে পড়তে পারে।(আমি একবার রেগে গিয়ে একটা ব্লগে একটানা ২০/৩০ টা গরুর ছবি দিয়ে পোস্ট দিয়েছিলাম)। সর্বপরি ব্লগিং ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে অবশ্যই বিরুপ প্রভাবে ফেলতে পারে যা মাঝে মাঝে কোন কোন ব্লগ সাইট থেকে চোখে পড়ে। তবে খুব শক্ত ও নিরবিচ্ছিন্ন মডারেশন বোর্ড ও ব্লগ সাইট কর্তৃপক্ষের সেবা দানের(ইচ্ছা ও পেশাদারিত্ব খু বেশি দরকার) মানের উপর নির্ভর করে ব্লগিং , সুস্থ সামাজিক ব্লগিং আমাদের চিন্তা ধারাকে বিকাশ, নতুন বন্ধু তৈরি ইত্যাদিতে সাহায্য করতে পারে।
বিঃদ্রঃ লেখাটি প্রথম প্রকাশিত প্যাঁচালীতে .
ধন্যবাদ,
মানচুমাহারা
তোমার লেখা প্যাচালীতে নেই 🙂