ভাজি, সেকচি, সেক্সি, ছেকছি, ঘন্ট, ভর্তা

হঠাৎ মায়ের কথা মনে পরল। মার রান্নার দক্ষতা ছিল অসাধারণ। মা যে লাল শাক রান্না(ভাজি) করত সেইটা দিয়ে এক থাল ভাত খাওয়া যেত। মা বেগুন/বাগুন ভেজে কলাই শাক(নাকি অন্ন কিছু ভুলে গেছি) দিয়ে যে ভাজিটা রান্না করত এইটা আমি মা মারা যাবার পর আর খাইনি।

মা ভাজি, সেকচি, সেক্সি, ছেকছি, ঘন্ট, ভর্তা এগুলো আলাদা আলাদা শব্দ ব্যবহার করত ধরন অনুসারে। মানে ধরেন নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় রান্না হলে সেইটা ভাজি, কোনটা ঘন্ট, কোনটা ভর্তা, কোনটা সেকছি ইত্যাদি।

আমাদের নড়াইলে সেক্সি মানে ইংরেজি ‘sexy’ না সব সময়।

সেক্সি/সেকচি/ছেকছি মানে ‘ভাজি’। কোন তরকারি কুচি কুচি বা ছোট ছোট করে কেটে যদি ভাজা হয় তাহলে তারে বলে সেক্সি বা ‘সেকচি’। যেমন লাউ সেকচি/সেক্সি ।

যদিও কুমড়ার ক্ষেত্রে সেক্সি শুনি নাই, কুমড়ার ক্ষেত্রে এটা হবে ঘন্ট। ঘন্ট মানে হচ্ছে যা মাখা মাখা।

আবার ধরেন ঘন্ট মানে কিন্তু ভর্তা না। যেইটা সিদ্ধা বা পোড়ানো হবে সেইটা হবে ভর্তা। যেমন পেয়ে ভর্তা যদি সিদ্ধ হয়, কিন্তু পেপে যদি ছোট ছোট/কুচি কুচি করে কেটে আপনি ভাজেন তাহলে সেই হবে পেপে সেক্সি/সেকচি/ছেকছি।

ভালোবাসা দিবসের প্রাক্কালে, ২০২৪

আগামীকাল ভালোবাসা দিবস। যদিও ভালোবাসার জন্য কোন দিবস লাগে না। তবে তর্কের খাতিতে ভালোবাসা চর্চার জন্য একটা দিবস আমার কাছে মন্দ লাগে না।

প্রতি বছর জন্মদিনে যেমন এক বছর বয়স বাড়ে, প্রতি বছর ভালোবাসা দিবসেও একই রকম আগের বছরের দিবস এর সাপেক্ষে এক বছর বয়স বাড়ে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে অভিজ্ঞতাও বাড়ে। ভালোবাসার ধরন পরিবর্তন হয়। আশেপাশের মানুষদের আচরণ পালটায়।

প্রতিবছর শেষে যদি এক একটা ভালোবাসার বছরের সাল তামামি করা যায় তাহলে ভালোবাসার উঠা নামা, ভালোবাসা অর্জন, বর্জন, হারানোর হিসাব নিকাশ এর একটা সামারি পাওয়া যায়।

পৃথিবীতে ভালোবাসা যায় এমন মানুষের সংখ্যা হাতে গোনা, ভালোবাসতে পারে এমন মানুষের সংখ্যাও হাতে গোনা। অনেকেই অনেক কিছু বাসে তবে সেটা ভালোবাসা কিনা সাময়িক ভাবে বুঝা যায় না। এর জন্য জীবনভর অপেক্ষা করতে হয়, শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।

5 Tips from Manchumahara

1. Enjoy every single day.
2. Don’t try to break or look for comfort zone, comfort zone is a trap or illusion.
3. Don’t waste time making money for your kids (make them ‘not stupid’ so that they can earn their own).
4. Don’t forget to give a fuck when it’s needed, don’t waste a fuck when it’s useless.
5. Don’t believe me, follow your own balls.

– The Manchumahara

Resume লেখার কিছু কুইক টিপস

১। Education: শুধুমাত্র শেষ এডুকেশনাল ডিগ্রী উল্লেখ করুন বা অনার্স/ডিপ্লোমা থেকে শুরু করুন, প্রাইমারি, হাইস্কুল, কলেজ এত কিছু দরকার নাই। যদি অনার্স বা ডিপ্লোমা না থাকে তাহলে শুধুমাত্র শেষটা।

২। Personal Details: এই অংশ টুকু দরকার নাই। আপনার চাকরি হবার পর বা চাকরি হবার আগে যদি জিজ্ঞাসা করে তখন ডিটেইলস দিবেন। রিসুম এর শুরুতে নাম, ইমেইল, ফোন এগুলো উল্লেখ করবেন। এই তিনটার বানান বা সঠিক তিন বার চেক করবেন। আমি ভুল মোবাইল বা ইমেইল নাম্বার লেখা রিজুম অনেক পেয়েছি।

৩। Job Specific Resume/Regular Update: রিজুম জমি জমার সীমানা না যে একবার লিখলেন আর সারা জীবন ওটা দিয়ে পার করবেন। আপনি যে জবে এর জন্য এপ্লাই করছেন তার উপযোগী রিজুম বানান। একটা মেইন রিজুম রাখেন যত ডিটেইলস আছে সব নিয়ে প্রয়োজনে। কিন্তু যদি প্রতিটি জব এ এপ্লাই করার আগে জব স্পেসিফিক নিজের স্কিল বা অনান্য বিষয় নিয়ে রিজুমটা নতুন আর একটা ফাইলে রিরাইট করেন তাহলে জবের ইন্টার ভিউতে ডাক পাবার সম্ভাবনা বাড়ে। ধরেন আপনি যে জবে এপ্লাই করেছেন সেটা পিএইচিপি স্পেসিফিক কিন্তু আপনি আপনার রিজিউমের শুরুতে প্রজেক্ট সেকশনে উল্লেখ করে জাভা দিয়ে বানানো প্রজেক্ট। পরেরটা নোড এর এবং ৩য়টাতে এসে পিএইচিপি। এটা না করে যদি পিএইচপি জবে পিএইচপির প্রজেক্ট আগে লিখেন তাহলে সেটা বেশি গ্রহনযোগ্য হয়।

৪। Skill: জব স্পেসিফিক স্কিল গুলো আগে লিখুন।

৫। Projects: যদি নিজের প্রজেক্ট কিছু থাকে তাহলে সেগুলো গিটহাবে সুন্দর করে উপস্থাপন করুন। গিটহাবে প্রতিটি প্রুজেক্টে রিডমি ফাইল যুক্ত করে প্রজেক্টের বর্ননা এবং কি কি কাজ করেছেন তার ডিটেইলস লিখেন, কি ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল এবং আপনি কিভাবে সলভ করেছেন তা লিখুন। রিজুমে আপনার বেস্ট২/৩/৪ টা প্রজেক্টকে সংক্ষেপে লিখুন। প্রজেক্ট এর নাম, কি কি টেক ব্যবহার করেছেন, ২/৩ লাইন বর্ননা। প্রজেক্টগুলো অবশ্যই জব স্পেসিফিক সবার আগে। প্রজেক্ট কত আগে করেছেন সেই সাল যুক্ত করুন।

৬। Experience: সবচেয়ে রিসেন্ট এক্সপেরিয়েন্স সবার আগে লিখুন, কম্পানীর নাম, সময়কাল, সেখানে কি কি কাজ করতেন সংক্ষেপে প্রতিটি এক্সপেরিয়েন্স এর জন্য লিখুন।

৭। Reference: প্রয়োজন না থাকলে বাদ দিন।

যত বেশি লম্বা রিজুম তত বিরক্তিকর। মানুষ যত এক্সপেয়েন্স গেইন করে তার রিজুম তত ছোট হয়। আপনি যদি লেখার কিছু না পান তাহলে লিখবেন না। কম বা অদরকারি বিষয়ে আপনার রিজুমে পড়তে বিরক্তি তৈরি হবে।

ভালো লাগলে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন, শেয়ার দিন।

ধন্যবাদ।

বাবা দিবস ২০২৩ঃ বাবারও বাবা আছে !

আমি ‘সুখ’ এর ছেলেঃ

ছোট বেলায় বুঝতে শেখার পর থেকে আমার একটা বুঝ হয়েছিল যে আমার বাবা আমাদের জন্য প্রানান্তকর পরিশ্রম করেন। আমার বাবার নাম নাম হচ্ছে “সুখ”। ছোটবেলা থেকে এখনও বাবার পরিচয় দিলে অনেকে বলে ‘ও আচ্ছা তুমি সুখ এর ছেলে!” । পরিবারকে টেনে নিয়ে যাওয়া এবং আমাদের বড় করার জন্য বাবার আসলে সুখের সময় ছিল না। বাবা তার জীবনের একটা বড় সময় পরিশ্রমই করে গেছেন। ছোট বেলা থেকেই আমার নিজের কাছে একটা ব্যাপার খুব ক্লিয়ার ছিল আর তা হচ্ছে বাবার কাছে আমি যত কম চাইব আমার জন্য বাবার তত পরিশ্রম কম করতে হবে।

আমি ‘আদৃতা’র বাবাঃ

আমি এখন আমার মেয়ে আদৃতার বাবা। সেই হিসাবে আমি হচ্ছি সেই বাবা যেই বাবারও বাবা আছে ! যাই হোক, আজকে সকালে নড়াইল থেকে ঢাকা এসে অফিস করছি। দুপুর বেলা মেয়ের সাথে যখন কথা হচ্ছিল ফোনে, সে আমাকে বলে, ‘বাবা আমি একা একা ভাত খাওয়া শিখে গেছি!’ এটা অবশ্যই দারুন সাহসী একটা কথা আর সেই সাথে ভয়ংকর পজেটিভ ব্যাপার। গত সপ্তাহে মেয়েকে নিয়ে একটা মাঠে গিয়েছিলাম। মাঠে নামার সময় যেহেতু ঢালু রাস্তা তাই ওর হাত ধরে প্রায় জোর করে নামালাম কারণ সে একা একা নামতে চায় আর আমার ভয় যদি পড়ে যায়। কিন্তু ঢালু অংশ নামার পর ঘটনা ঘটল আরো ভয়ংকর। সে এবার আমার হাত ছেড়ে একা একা আবার ঢালু অংশ হেটে উপরে উঠল, আর একা একা নামতে নামতে বলল, ‘বাবা আমি বড় হয়ে গেছি না, এখন আমি একা একা নামতে পারি !’ মেয়ে বড় হয়ে কি করবে তা আমি নিশ্চিত না তবে আমি তার বেড়ে উঠা নিয়ে চিন্তিতই বটে।

ধৈর্য হারিয়ে সার্টফিকেট বা মটর সাইকেল পুড়ানো !

সার্টিফিকেট মানুষের চাকরির নিশ্চয়তা দেয় না এই বোধদয় এই সময়ে হওয়াটাও জরুরী। যারা চাকরি দেন তাদেরও চাকরির জন্য সার্টিফিকেট এর চাইতে স্কিল সেট এর বিষয় ফোকাস করে বিজ্ঞাপন দেওয়া উচিত।
সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলা বা রাস্তায় মটর সাইকেল এর রুল ব্রেক করার পর মামলা বা ফাইন খেয়ে মটর সাইকেল পুড়িয়ে ফেলা একই বিষয়। দুটোই হচ্ছে ধৈর্য হারানো অথবা কারো কারো ভাষায় অন্যায় করে মানুষের সহানুভূতি আদায়। সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলা ধৈর্য বিচ্যুতি ছাড়া আর কিছু না।

যে সার্টিফিকেট দিয়ে আপনি চাকরি পাচ্ছেন না সেটার গুরুত্ব আপনার কাছে নাও থাকতে পারে এটা ঠিক। আমার বুয়েট এর সার্টিফিকেট আমি ১০ বছর পর গিয়ে উঠাইছিলাম(এই সার্টিফিকেট তোলার জন্য আমি কলেজ এর সার্টিফিকেট তুলতে গেছিলাম ১২/১৩ বছর পর, সেইটা অন্য ইতিহাস)। আমার কোন কাজে সেই সার্টিফিকেট ফটোকপি করে জমা দেওয়া লাগে নাই কিন্তু বুয়েটে ভর্তির সময় আগের এডুকেশন গুলোর সার্টিফিকেট অসংখ্যবার ফটোকপি করা লেগেছিল। এমনকি ঐ সময় সার্টিফিকেট ফটোকপি করতে যে খরচ হত সেটার ব্যয় নিজের কাছেই ভারীই লাগত।

এটা ঠিক যে সবার সার্টিফিকেট লাগবে এমন সিচুয়েশন না। কারো কারো সার্টিফিকেটই সব। আর এজন্যই এখন থেকে নতুন ভাবে ভাবতে হবে। ১০টা চাকরির পোস্ট আর প্রার্থী যদি হয় ১০০০ তাহলে ১০ জন বাদে অন্যরা সার্টিফিকেট থাকলেও চাকরি পাবে না। এটা মাথায় রেখেই সার্টিফিকেট এর জন্য পড়তে হবে যদি আপনার কাছে সার্টিফিকেটই সব হয়। আর না হলে ক্লাস্ট ৫ বা বড় জোর ১০ ক্লাস পড়ার পর ইস্তফা ব্যবসা বানিজ্য বা শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করা শুরু করা উচিত। সবার লেখাপড়া শেখার দরকার নাই। স্বাভাবিক জ্ঞান অর্জন স্কুল কলেযে না গিয়েও বিভিন্ন বই পড়ে শিখে নেওয়া যায়। আর ছোট বেলা থেকেই টাকা পয়সা ইনকামের জন্য লেগে পড়া যেতে পারে।

পায়খানা – দ্য টয়লেট !

একজনের ছেলের বিয়ের কথা চলতেছিল। মেয়ে বাড়ির লোক ছেলে বাড়িতে বিয়ে ঠিক করতে আসলে ছেলের বাড়ির লোক বলেছিল যে আমার ছেলে ঢাকায় থাকে, পায়খানা কত্তি বাড়ির বাইরে যাতি হয় না। পায়খানা ঘরের ভেতর! আসলে গ্রাম থেকে শহরায়নের বা মানুষের জীবনমানের উন্নতির ধাপে মানুষ বাগান থেকে বাড়ির সীমানার ভেতর অদূরে টয়লেট এবং এরপর পাকা বাড়ি বানালে ঘরের ভেতরেই টয়লেট বানিয়েছে বা অভ্যস্থ হয়েছে।

আমাদের ছোট বেলায় টয়লেট ছিল ঘরের বাইরে বাড়ির সীমানার অদূরে। আমাদের বাড়ি রাস্তার পাশে , রাস্তার পাশে ছিল ক্যানাল বা খাল টাইপ যা দিয়ে বর্ষার পানি বয়ে বিলে চলে যেত। রাস্তা, খাল এরপর আমাদের বাড়ি। টয়লেটটা ছিল সেই ক্যানাল বা খালের পাশে। বর্ষাকালে অনেক সময় এত বেশি পানি হত যে প্রায় আমাদের বাড়ির উচ্চতার কাছাকাছি চলে আসত। টয়লেটের মল যে গর্তে জমে তাতে পানি ঢুকে এমন অবস্থা হত যে টয়লেটে ঢুকলে দেখা যেত মল ভেসে আছে, কারণ মল যেখানে গিয়ে জমা হবে সেখানটা খালের পানির লেভেলে চলে আসছে। এই অস্বস্থিকর পরিবেশ দুই তিন দিন থেকে সপ্তাহ খানেক হয়ে যেত মাঝে মাঝে। এরপর পানি কমে গেলেই আবার আগের মত স্বাভাবিক হয়ে যেত। মানুষের জীবন হচ্ছে আমাদের সেই পুরাতন টয়লেটের মত। একটু চিন্তা করে হিসাব করলে আমাদের এই টয়লেটের সাথে আপনার জীবনের মিল খুঁজে পাবেন।

আমার বিয়ের আগেই সেই টয়লেট পরিত্যাক্ত হয়ে ঘরের ভেতরে পায়খানা করার ব্যবস্থা হয়েছিল। এরপর থেকে আমরা ঘরের ভেতরেই হাগি !

সময়ের পরিক্রমায় সেই রাস্তার পাশের খাল মাটি দিয়ে ভরাট করতে করতে খালই নাই। পানিও জমে না। এখন আসলে আমাদের বাড়ির আশেপাশের কোথাও সেই খালের অস্তিত্ব নাই। আমাদের সেই পুরাতন টয়লেট বাড়ির অদূরে এখনো ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। টয়লেট এর ইতিহাসে এখনো সেই বর্ষাকালের দুই তিন দিনের দূর্বিসহ স্মৃতি জমে আছে। কোন একদিন টয়লেটটি ভেঙে ফেলা হবে, আমাদের ঘরের বাইরে হাগার স্মৃতিও হারিয়ে যাবে !

শ্রমিক দিবসের প্রাক্কালে- ১লা মে, ২০২৩

ঘটনা-১ঃ একটা চামড়ার বেল্ট পরিধান করি বেশ কিছু বছর। ব্যবহার করতে করতে কিছু কিছু জায়গায় রং উঠে সাদা হয়ে গিয়েছিল কিন্তু বেল্ট ভালো আছে। অনেক দিন ধরে বেল্টটাকে রং করানোর চিন্তা করতেছিলাম কিন্তু খয়েরি রং ছিল না আশেপাশে যারা জুতা সেলাই এবং পালিশ এর কাজ করে। এক সময় বেল্ট কোমরে জড়ানো ছাড়াও অনেক ব্যবহার ছিল। বেল্ট দিয়ে শ্রমিকদের পেটাতো মালিক শ্রেনী, সেই পাশবিক দিন গুল পেছনে রেখে পৃথিবী এখন অনেক এগিয়ে। ছোট বেলায় দুই একটা বাংলা সিনেমায়ও কোমরের বেল্ট খুলে পেটানোর দৃষ্টি দেখেছি। বেল্টকে চাবুক হিসাবে ব্যবহার হত আদি কালে। যাই হোক, সেই দিন এখন আর নাই।

বেল্টও রং-পালিশ করা যায়। আমাদের এশিয়ান কালচারে কোন কিছু চরম মাত্রায় ব্যবহার অনুপযোগী না হওয়া পর্যন্ত আমরা যে কোন কিছুই ব্যবহার করে অভ্যস্থ। যাই হোক, আজকে সকালে বাসা থেকে বের হয়েই দেখলাম বাসার সামনে কালিদাশ বাবু আশেপাশের বেশ কয়েক বাসার জুতা নিয়ে বসছে কালি করার জন্য আর তাকে ঘিরে কাজ দেখছে আশেপাশের বাসার দারোয়ানরা (আধুনিক সমাজে উনাদের সিকিউরিটি গার্ড বলে তবে একক মালিত চালিত বাসা গুলোতে এক ব্যক্তিকে দিয়ে বাসার সিকিউরিটি থেকে শুরু করে বাসার বাজার করানো এবং পারলে গা টেপানোর কাজও অনেকে করান)। আজকে শ্রমিক দিবস এর ছুটি থাকলেও কালিদাশ বাবু ছুটি নেননি। উনার নাম সত্যি সত্যিই কালিদাশ (মজিদ চাচা না :P) যা আমি তাকে কাজ শেষে টাকা দেওয়ার আগে জিজ্ঞাসা করে জেনেছি। যেহেতু দারোরান সবাই আমাকে চেনে তাই তারা আমার কাজটা আগে করায়ে দিয়েছে। চামড়ার বেল্ট খানা রং করাতে পেরে শ্রমিক দিবসের প্রাক্কালে আমি বেশ খুশি। আজকে আমার অফিস ছুটি নাই, আসলে এই ছুটি ঈদের ছুটিতে দিয়েছিলাম কারণ আজকে একটা বিশেষ দিন তাই শ্রমিক দিবসে কোডবক্সার এর ছুটি থাকে না(আগে থাকলে এখন থেকে থাকবে না, এই ছুটি আগে বা পরে দেওয়া হবে)। আজকে কি বিশেষ দিন এটা পরে জানাবো।

ঘটনা-২ঃ সকালে নাস্তা করার জন্য গেলাম দাওয়াত-ই-ঢাকা নামের একটা রেস্টুরেন্টে। রেস্টুরেন্টের নামের অর্থ কি এটা ক্যাশেতে যিনি বসেন তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম কিন্তু উনি বলতে পারেন না। সম্ভবত অর্থ হচ্ছে, ‘ঢাকার দাওয়াত’।

যাই হোক, রেস্টুরেন্টের ভেতরে কাস্টমারে ঠাসা, এরা ঈদের পর গতকাল থেকে খুলেছে। এই শ্রেনীর রেস্টুরেন্টগুলোকে আমি বলি জমিদারি রেস্টুরেন্ট। এরা ঈদের আগের দিন পর্যন্ত চালায় এবং ঈদের ১৫-২০ দিন পর আসে, পারলে ঈদুল ফিতরে গিয়ে ঈদুল আযহার পরে খুলে। রেস্টুরেন্টের বাইরেও অনেক লোক পার্সেল নিবে বলে দাঁড়ানো ছিল। আমি ভীর ঠেলে ভেতরে গিয়ে বসলাম। আগে যারা খেয়ে গেছে ঐ টেবিলে তাদের রেখে যাওয়া প্লেট তখনোও ছিল। আমি তিনটা প্লেট এক জায়গায় করে দিলাম নিজ উদ্যোগে ভাবলাম যদি এতে কিছুটা পরটা পাওয়ার গতি বাড়ে। শ্রমিক দিবসের দিনেও প্রচন্ড কর্ম ব্যস্ত ওয়েটার একজন এসে সেই তিনটা প্লেট না ধুয়ে শুধু মুছে রেখে দিল সামনে নতুন কাউকে পরটা দেওয়ার জন্য। ওরা নাকি যে বাটিতে মানুষ সব্জি খায় সেটা পানি দিয়ে বার বার ধুয়ে ফেলে কিন্তু যেটাতে পরটা খায় সেইটা নাকি বার বার মুছে মুছে দেয় বা দিন শেষে একবার মুছে !

অনেকক্ষন বসে থাকার পর ধৈর্য্য হারিয়ে উঠে পরলাম। এই রেস্টুরেন্ট ছিল সাইড রোডে। মেইন রোড সংলগ্ন বছরের ৩৬৫ দিন ২৪ ঘন্টা চলা দুইটা রেস্টুরেন্ট আলম আর আমজাদ দেখলাম বন্ধ ! তখন আমার খেয়াল হল কেন দাওয়াত-ই-ঢাকা আজকে এত ফায়ার হয়ে আছে। কিন্তু ধৈর্য্য হারিয়ে যেখান থেকে উঠে আসছি সেখানে আবার ফেরত যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে ইগোর কারণে আর গেলাম না। যদিও আমাদের দেশে এই রকম ঘটনা অহরহ ঘটে। অনেক সময় ইচ্ছা না থাকলেও একই জায়গায় আমরা নিরুপায় হয়ে বার বার যাই সার্ভিস নিতে। আমাদের পরিবার কিংবা সমাজ জীবনেও একই ঘটনা ঘটে। পরে সামান্য হেটে অন্য একটা গলিতে খুবই কম ভীর আছে এমন একটা জায়গা থেকে নাস্তা সেরে অফিসের দিকে রওনা হই। পেটের ধান্ধায় আসলে আমাদের কাজ করা লাগে, পেটই আমাদের চালায়

মেধা ভিত্তিক কাজ যারা করে তাদের আমি শ্রমিক বলি না এবং আমার জানা জ্ঞানে তারা শ্রমিক না, যারা শ্রম ভিত্তিক কাজ করে তাদের শ্রমিক বলা হয়। মেধা ভিত্তিক কাজে মেধার পাশাপাশি কায়িক শ্রমও দেওয়া লাগে এটা সত্য।

সবাইকে মহান মে দিবস বা শ্রমিক দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।