প্রথম ফ্রিল্যান্স শব্দটি শুনেছিলাম সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত একজনের কাছ থেকে। একজনকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম আপনার পেশা কি বা কি করেন, উত্তরে উনি বলেছিলেন, আমি ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। তাৎক্ষনিক ভাবে বুঝতে পারলাম না, ও আচ্ছা বলে সায় দিয়েছিলাম। পরে বুঝতে পারলাম, উনি স্বাধিন ভাবে সংবাদ সংগ্রহ করেন, সেটা কোন নিউজপেপারে কন্ট্রিবিউট করেন, বা নিউজ বেঁচেন , কোন কোন সময় ফিচার লিখে জমা দেন বা বিক্রি করেন।
এক সময় আমি প্রায় ২/৩ বছর ফ্রিল্যান্স পেশার সাথে ছিলাম। তবে আমি স্বাধিন ভাবে বেচতাম প্রোগ্রামিং এর দক্ষতা। আমি জানতাম এটা কখনই আমার সারাজীবনের জন্য পেশা হবে না। তখন ৬ মাস চাকরির(ওটাই আমার একমাত্র চাকরি যা পরে পড়ালেখা শেষ করার জন্য ছেড়ে দেই যা নিয়ে লিখতে গেলে আর একটা বড় গল্প হয়ে দাঁড়াবে) অভিজ্ঞতা ছিল। সব সময় মাথায় ছিল স্বাধিন পেশা থেকে এটাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার এবং সেটাই গন্তব্য হওয়ার কথা ছিল এবং আমি তাই করেছি। আমি বিশ্বাস করি না যারা এখন টেক ফ্রিল্যান্স করেন তারা যদি রিমোটলি কোন কম্পানীতে পার্মানেন্ট চাকরি না করেন তাহলে কেউ আগামী পাচ বা দশ বছর পর ফ্রিল্যান্স কাজ করবেন।
একটা দেশ এমনি এমনি গঠন হয় না, এটাতে পরিকল্পনা করে তৈরি করতে হয়। যেমন কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট একটা সময় প্রচন্ড লোডশেডিং থেকে মুক্ত হতে সহায়তা করেছিল বটে তবে তা পার্মানেন্ট সল্যুশন ছিল না কোন দিনই এবং হবার কথা না। একটি নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য দরকার দীর্ঘ মেয়াদী এবং স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনা। স্বল্পমেয়াদী আপনাকে আপাতত ঠেকার কাজ চালাতে সাহায্য করতে পারে তবে তা কিছুদিনের ভেতর অকার্যকর হবে এটা নিশ্চিৎ।
আলোচনার সুবিধার্তে যারা রিমোটলি কাজ করেন তাদের ফ্রিলান্সার না বলে যারা শুধুমাত্র অনলাইন মার্কেটপ্লেস গুলোতে কাজ করেন তাদের ফ্রিল্যান্সার হিসাবে ধরে নিচ্ছি।
একজন মানুষ তার জীবন ধারণের জন্য টাকা উপার্জন করবে এবং সেইটার একটা ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। যেমন, ৫ দিন অসুস্থ থেকে যদি অফিসে না যেতে পারেন আপনার চাকরিতে আপনি মাস শেষে পুরা বেতনই পাবেন। যিনি ব্যবসা করছেন বা কম্পানী চালাচ্ছেন তিনিও যদি অসুস্থ থাকেন তাহলে ৬ষ্ঠ দিনে তিনি আবার তার প্রতিষ্ঠানে ফিরবেন।
আইটিতে বাংলাদেশ মাত্র কিছু করা শুরু করেছে। আমাদের দরকার প্রচুর দেশীয় আইটি প্রতিষ্ঠান, দেশীয় আইটি প্রফেশনাল ( ফ্রিল্যান্সার নয়) এবং দেশীয় আইটি প্রডাক্ট ও সার্ভিস কনজুমার। দেশীয় প্রতিষ্ঠান গুলো অবশ্যই দেশী এবং বিদেশী উভয় শ্রেনীর ক্লায়েন্টকে সার্ভ করতে পারে। তবে শুধু মাত্র বিদেশী ক্লায়েন্ট নির্ভর হয়ে টিকে থাকা অনেকাংশে ঝুঁকি থেকে যায় যদি না প্রডাক্ট বা সার্ভিস যা অফার করা হচ্ছে তা শুধুমাত্র গ্লোবাল ক্লায়েন্টদের জন্য।
একজন ফ্রিল্যান্সার যদি একা ইনকাম করে পরিবারের চারো ৪-৫ জনের পেট চালান তাহলে একজন আইটি বিজনেস ম্যান ৫০ জন শনের খোরাক ম্যানেজ করছেন। একজন ফ্রিল্যান্সার যা আয় করেন একটা প্রতিষ্ঠান তার অনেক গুন আয় করছে। প্রতিষ্ঠান গুলো অনলাইন মার্কেট প্লেসের উপর যদি ১০% নির্ভরশীল হয় তো ফ্রিল্যান্সাররা প্রায় ৯০% ভাগ। প্রায় শুনি অমুক অনলাইন মার্কেট প্লেসে বাংলাদেশ থেকে কাউকে নতুন ভাবে এপ্রুভ করছে না আবার যদি একাউন্ট ব্যান করে দেয় তাহলে পুনরায় নতুন করে শুরু করতে হবে !
কয়েক বছর ধরে দেখছি সরকারী ভাবে যতটা না প্রতিষ্ঠান গুলোতে এগিয়ে নিতে সাহায্য করা দরকার তার চেয়ে বেশি আগ্রহ ফ্রিল্যান্সার তৈরিতে যা অবশ্যই হাস্যকর এবং এটা কোন ভাবেই দীর্ঘ মেয়াদী হতে পারে না। শিক্ষিত ত্রুনদের অনেকটা ভুল পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি একজন ব্যক্তি কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলে যে রেটে নতুন কিছু শিখে বাসায় একা কাজ করলে তার ২০%ও শিখতে পারে না। অন্যদিকে অনেক বেশি ফ্রিল্যান্স পেশা নিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার কারণে দেশীয় প্রতিষ্ঠান গুলো পেশাজীবি পাচ্ছে না, এগোতে পারছে না, অনেকে ডলারে আসক্ত হয়ে পড়ায় টাকার অংকে দেশীয় কম্পানীতে চাকরি করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
সাম্প্রতিক পেপাল এবং জুম নিয়ে অনেক বিতর্ক হচ্ছে আমি এটার ভেতর যাব না, সরকারের চিন্তা কেউ যেন হুন্ডি করে টাকা না আনে, আমার জানা মতে ফ্রিল্যান্সাররা এটা করে না, এটা করে শ্রমিক হিসাবে যারা দেশের বাইরে যায় তারা এবং এর কারণ হচ্ছে বৈধ পথে টাকা পাঠাতে অনেক খরচ। জুম দিয়ে শুধু ব্যক্তিগত টাকা আনা যায় , প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীক লেনদেন না অথবা যদি ওরা বুঝতে পারে এটা ব্যবসায়িক লেনদেন তাহলে সেই ট্রান্সজেকশন আটকিয়ে দিতে পারে।
কেন এত কথা বলছি ? ভাবুন দেশের সব শিশু স্কুলে না গিয়ে বাসায় বসে পড়ালেখা করছে। দেশীয় স্কুল কলেজ,ইউনিভার্সিটি সব বন্ধ। বিষয়টা ভাবতে অবাক লাগছে নিশ্চয়। যদি দেশের আইটি ইন্ডাস্ট্রিকে সত্যিই এগিয়ে নিতে হয় তাহলে ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে সকল প্রচারণা বন্ধ করুন, যদি কেউ ব্যক্তিগত আগ্রহ থেকে সাময়ীক কিছুদিনের জন্য করে সেটা ব্যতিক্রম হিসাবে নেই।
LICT প্রজেক্ট আলাদা করে না করে এই টাকা দিয়ে ভকেশনাল গুলোকে উন্নত করা যেত, এখন কেউ পাওয়ার টিলার চালানো শিখতে ভকেশনালে কেন কেউ যাবে, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এখন যে ধরনের কোর্স করানো দরকার সেই গুলো চালু করা যেত, নতুন এবং আধুনিক কোর্স। অন্যদিকে ইউনিভার্সিটি থেকে যারা আইটির উপযোগী সাবজেক্ট থেকে বের হচ্ছে তাদের জন্য কোর্সকারিকুলাম ঢেলে সাজানো যেত, LICT প্রজেক্টের কিছু টাকা টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিগুলোকে দেওয়া যেত।
স্বল্প মেয়াদি এই সব কোর্স করে কোনদিনও প্রফেশনাল কাজ করা সম্ভব না বা এটা দেশকে দীর্ঘ মেয়াদী কিছু দিতে পারবে না। তাই যদি দেশের আইটি ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে নিতে হয় প্রতিষ্ঠান টার্গেট পরিকল্পনা করুন, প্রযুক্তি টার্গেট পরিকল্পনা করুন, প্রফেশনাল তৈরি করুন তারা যেন ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করে প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য প্রস্তুত থাকে।
অনেকে শুধু অভিযোগ করে আমি পরামর্শ দিলাম। পরামর্শে মামুর বেটা বেজার হলে হোক।
লেখাটি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম