সেদিন কে যেন বলছিল আমরা নাকি কখন কোন রিক্সাওয়ালার চেহারা মনে রাখি না। যদ্দুর মনে পড়ে পল্লব দা(বন্ধুবর পল্লব দা) বলেছিল, আমি তার কথা সায়ও দিয়েছিলাম। কিন্তু গত কয়েকদিন আমি নিজেকে ভুল আবিস্কার করেছি। আমি অন্তত দুইজন রিক্সাওয়ালাকে চিনি যারা আমাকেও চেনে। আজকে একজনকে জ্জিজ্ঞাসা করলাম, আপনাকে আমি আগেও দেখেছি। আপনি কি আমাকে দেখে চিনতে পেরেছেন। সে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। আমার মনে পড়ছে আমি অনেকজন রিক্সাওয়ালার চেহারা এই মুহুর্তে মনে করতে পারছি যারা আমাকে চিনবে না কিন্তু তাদের আমি দেখলে চিনতে পারব। তাদের কেউ অল্প বয়সে কিংবা খুন খুনে বৃদ্ধ বয়সে রিক্সা চালাচ্ছে। আমি সাধারণত যে রিক্সাওয়ালাকে ভালো মনে করি তার সাথে গল্প জুড়ে দেই। খেসারতও দিতে হয়েছে মানে অতিরিক্ত খাজুরে আলাপ জুড়ে দেওয়ার পর পারিবারিক সমস্যা, ছেলেপুলের লেখাপড়ার কথা বলে কেউ কেউ সাহায্য চেয়েছে এবং আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত সাহায্য করেছি। এটাকে কেন খেসারত বল্লাম জানি না, আমি কি তাহলে মন থেকে সাহায্য করিনি। আমি মনে করি করেছি কিন্তু আমার মনের ভেতর একটা সংশয় কাজ করে আর তা হলে এদের কেউ কেউ মিথ্যা বলে আমাকে ঠকিয়েছে। ঠকালেও বা কি আমাকে কত জন ঠকিয়েছে, কত জন ফ্রিল্যান্সার হিসাবে ওয়েব সাইট বা এপ্লিকেশন এর কাজ করিয়ে তারপর টাকা না দিয়ে ভেগে গেছে। হিসাব করে যোগ করলে তা দিয়ে এখন একটা হাই কনফিগারেশন এর ম্যাক বুক প্রো কিনে ফেলতে পারতাম ! আমি সব সময় জিততে চাই না, তবে মাঝে মাঝে কিছু বিষয়ে আমি জিততে চাই। এটা আমার জিদ না, এটা আমার চাওয়া, মন থেকে চাওয়া। জিদ আর চাওয়া এক নয়। আমি যখন জিদ করে জিতি তখন তার প্রতি পরে আর আগ্রহ নাও থাকতে পারে কিন্তু যখন মন থেকে চায় মানে এই জেতা আসলে মনের বাসনা পূর্ণ হওয়ার থেকেও বেশি। এই ২য় জেতার বিষয়টা অনেক জটিল। প্রথম জেতার বিষয়টা জেতার পর তাচ্ছিল্য চলে আসে, ২য় জেতার বিষয়টা আত্মিক এবং আরো অনেক দায়িত্ব বেড়ে যায়। ভয় হয় ঠিক মত যত্নে রাখতে পারবতো !
আমি শুধু রিক্সাওয়ালা না, আমি অন্তত একজন মুড়িওয়ালাকে চিনি যে আমাকেও চেনে। মাঝে আমি এক সময় প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার সময় পাঁচ টাকা মুরি চানাচুর খেতাম সরিসার তৈল দিয়ে। শীতের সময় সুযোগ পেলে দিন দুই একবার এই কাজ করি। কিন্তু আমি যার কাছ থেকে খেতাম সে প্রতিদিন সন্ধ্যার সময় একটা নির্দিষ্ট জায়গায় দাড়াত আর আমাকে দেখলেই ‘প্রিফরম্যাটে’ মুড়ি বানানো শুরু করত। আমরা মনে হয় চাইলেই একজন মুরি বিক্রেতার মুখ অনেক দিন মনে করতে পারি। আমি অন্তত দুই জন মুড়ি আলার সাথে মোটামুটি সখ্যতা গড়ে তুলেছি এই পর্যন্ত। একজনের সাথে অনেক দিন দেখা হয়না কিন্তু আম নিশ্চিৎ জানি সে আমাকে দেখলেই চিনে ফেলবে।
চা খাওয়া আমার ঠিক নেশা নয় কিন্তু প্রতিদিন ২-১০ কাপ চা আমি খাই। হিসাব করে দেখলাম আমাকে ৫ জন চাওয়ালা কম বেশি চেনে। এরপেছনে কারণ থাকতে পারে আমি মাঝে মাঝে একটা ব্যতিক্রম ভাবে চা চাই, যেমন
১। আদা ছাড়া
২। লতাপাতা ছাড়া, এটা যে আমি ইচ্চা করে বলি তা নয়। আমার কেন যেন প্লেইন রং চা খেতে পছন্দ হয় কিন্তু যে জায়গা গুলোতে রং চার প্রাপ্যতা বেশি সেখানে কেন যেন ওরা রং চা বানানো ভুলে গেছে, চায়ের সাথে আদা, জর্দা, তেজপাতা, লতাপাতা, পান তামুক কত কিছু যে মেশায় !
৩। ঢাকা ইউনির হাকিম চত্তর বা লাইব্রেরীর পেছনে একটা চার দোকান থেকে প্রতিদিনই প্রায় এখন পেপের জুস খাই। ওদের দোকানে অনেকেই বসে তবে একজন আছে আমাকে দেখলেই একটা মিষ্টি করে হাসি দেয় কারণ আমি প্রায় পর পর দুই গ্লাস জুস খাই 😛
আমি তো এলাকার রিক্সাওয়ালা ও সিএনজিওয়ালা অনেককেই চিনি। (এক সিএনজিওয়ালা ছিলো প্রায় বাধা হয়ে গিয়েছিলো, রোজ সকালে ওনার সিএনজিতে যেতাম, তবে কোন চুক্তি বা অন্য কোন কথা হতো না, রোজ ভাড়া নিয়ে কথা বলতাম রোজ নেমে ভাড়া দিয়ে ভালো থাকবেন বলে অফিসে হাঁটা দিতাম)
এই গতকালকে একজনের রিক্সায় চড়লাম যার রিক্সায় অনেকবার উঠেছি। এদের অনেকে আমার সাথে গল্প করার চেষ্টা করলেও আমার শোনার সমস্যার জন্য বেশিদূর আগাতে পারেনি।