নড়াইল জেলায় একজন কবি ছিলেন(উনি মারা গেছেন) নাম বিপিন সরকার। উনি স্বভাব কবি বিপিন সরকার নামে পরিচিত। আমাদের বাড়ির পাশে রহমান চাচা ছিলেন। উনি শেষ বয়সে সময় কাটানোর জন্য একটা ছোট মুদি দোকান রাস্তার পাশে চালাতেন, বসে থাকতেন, বই পড়তেন এই রকম। আমি মাঝে মাঝে উনার দোকানে গিয়ে উনার সাথে গল্প করলাম। তখন হাই স্কুলে পড়ি না হলে প্রাইমারি। আমি এলাকার মুরুব্বী আরো একজনের সাথে মিশতাম , উনি জলিল চাচা। তার কাছ থেকে দাবা খেলা শিখেছিলাম। জলিল চাচা সময় কাটানোর জন্যই দাবা খেলতেন। যাই হোক, একদিন রহমান চাচার দোকানে বসে আছি, দেখি উনি একটা খাতা থেকে কিছু পড়ছেন, হাতে লেখা কিছু। জিজ্ঞাসা করলে বল্লেন, এটা স্বভাব কবি বিপিন সরকারের কবিতার একটা খাতা, উনাকে পড়ার জন্য দিয়েছেন। সেই দিন উনি বেশ কিছু কবিতা আমাকে শোনালেন যার একটা কবিতার অর্থ আমার এখনো মনে আছে।
কবিতা বা ছড়াটা ছিল ধান খেতের আইল নিয়ে, যারা ধান খেতে গিয়েছেন দেখবেন পাশাপাশি দুইটি জমি ভেতর সরু একটা পা দেওয়ার মত করে আইল বা রাস্তা তৈরি থাকে। এই আইলের উপর দিয়ে একজন মানুষই হাঁটা কষ্টকর হয়ে যায়, দুইজন যেতে গেলে ঝুঁকি থাকে। কবিতাটাতো মনে নেই তবে ভাবার্থ এই রকম যে, দুই ডাকাত ধান খেতের আইল দিয়ে হাটতে হাটতে সামনা সামনি পড়ছে, কেউ কারে রাস্তা ছাড়ে না। শেষ পর্যন্ত হাতাহাতি, মারামারি, সেই মারামারিতে দুই ডাকাতের তাদের স্ব স্ব গ্রামের লোকের অংশ গ্রহন(একে গ্রাম্য ভাষায় বলে কাইয্যা বা কায্যে) বিরাট হুলুস্থুল ব্যাপার।
এরপরের দিন দুইজন শিক্ষিত ব্যক্তি আসলেন একইভাবে ধান খেতের আইল ধরে সামনাসামনি। তারা উভয় উভয়কে যাওয়ার যায়গা দিতে গিয়ে দুইজনই আইল থেকে নেমে ধান খেতের কাঁদার ভেতর নেমে গেলে, দুজন দুজনকে সালাম দিয়ে চলে গেলেন।
জলিল চাচা চলে গেছেন অনেক আগে যার সাথে দাবা খেলতাম, আমার যদি ভুল না হয় রহমান চাচাও নাই এখন। তবে সেইদিন তার দোকানে বসে স্বভাব কবি বিপিন সরকারের যে কবিতা শুনেছিলাম তারই প্রতিফলন পেলাম সাম্প্রতিক লক্ষীপুরের একজন এডিসি এবং সাবেক সিভিল সার্জন এর কে পথ ছাড়বে সেইটা নিয়ে ঝগড়া থেকে হাতাহাতি, জেল জরিমানা ইত্যাদি নিউজ পড়ে। তবে বিপিন সরকারের কবিতার ডাকাত আর শিক্ষিত ব্যক্তি এখানে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে।
বিপিন সরকার বেঁচে থাকলে এই কবিতা পুনরায় লিখতেন এটা আমরা আশা করতেই পারি।